সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন
সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন মেয়র আরিফ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ৫:০২:৫৪ অপরাহ্ন
চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পাশে থাকবো ঃ মেয়র আরিফ
স্টাফ রিপোর্টার: সহকর্মী ও সিলেটের সচেতন সমাজের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিদায় নিচ্ছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আলোচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিগত ১০ বছরের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি। নগর উন্নয়নে আন্তপ্রাণ আরিফুল হক চৌধুরীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনসহ নাগরিক প্রতিনিধিরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমরা বৃহত্তর সিলেটের নাগরিক। কে কোন দল করি বিষয় নয়, জনগণ আমাদের নির্বাচিত করেছে, সুতরাং সিলেটের উন্নয়নে সবাইকে দলমতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে সিলেটের বহুমুখী উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অন্যদিকে সংবর্ধনার জবাবে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্পীতির ঐতিহ্যকে ধারণ করে নির্মূহভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। গত দশ বছরে সিলেটকে একটি জনবান্ধব নগর প্রতিষ্ঠায় যেটুকু অর্জন হয়েছে আমি তা নগরবাসীকে উৎসর্গ করলাম। তিনি বলেন, মেয়র না থাকলেও সিলেটের উন্নয়নে সব সময় সক্রিয় থাকবো। নগরীর চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী পরিষদকেও প্রয়োজনে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
ক্বীনবিজ্র সংলগ্ন নগরীর সারদা স্মৃতিভবন চত্বরে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরো বলেন, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, সেই বরাদ্দ ফেরত গেছে। তার যথাযত ব্যবহার হয়নি। আজ জোর গলায় বলা যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সিলেট নগরীর উন্নয়নে আরিফুল হক চৌধুরীর নানা সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরো বলেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উন্নয়ন কর্মকান্ড আটকে ছিলো অবৈধভাবে বসবাস করা কিছু ঘরবাড়ির জন্য। ওই সময়ে মেয়র আরিফের সাহসী পদক্ষেপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং বর্তমানে উন্নয়ন নির্বিঘেœ চলছে।
বক্তব্যকালে মজার ছলে আরিফকে ‘ভাঙ্গা মেয়র’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁর নগরীর যে প্রশস্ত রাস্তাঘাট দৃশ্যমান হয়েছে তার অবদান মেয়রের এবং এই নগরীর বাসিন্দাদের। তিনি বলেন, মেয়র আরিফ তাদের বাড়ির দুদিক থেকে সাড়ে ৩ ফুট করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি রাস্তা প্রশস্তকরণে নিয়ে যায়। আমাদের পরিবারও স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেই। এরপুরো কর্তৃত্ব মেয়রের।
নগর উন্নয়নে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, নগর ভবন ঘিরে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এর ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন এবং তিনি অনুমোদন করেছেন। যেটা অনেক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, মেয়র গুণীজনদের সম্মান দিতে জানেন তারও প্রমাণ দিয়েছেন। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তাঁর জীবদ্দশায় নগর ভবনের পক্ষ থেকে গুণীজন শ্রেষ্ঠ সংবর্ধনা দিয়ে বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন এবং ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মেয়র আরিফের সংবর্ধনাকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, এটা একটি বিরল ইতিহাস। আমি আশা করবো আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে এই প্রথা চালু হোক। এতে করে বিদয়ী মেয়রের কাছ থেকে শিখা যাবে কিভাবে সত্যিকার ভাবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়া যায় এবং তারকা হওয়া যায়। এছাড়া, আরিফুল হক চৌধুরী পরিচালিত উন্নœয়ন কর্মকান্ড সরকারের মহানুভবতা ও আরিফের অধিকার আদায় করে নেয়ার কৌশলের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, আরিফ আওয়ামী-বিএনপির মেয়র। তিনি বিএনপির মেয়র হওয়া সত্বেও তার যোগ্যতায় সরকারের মন জয় করে নিতে পেরেছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবর্ধনার জবাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মানুষের জন্য কাজের অনুপ্রেরণাদাতা হিসেবে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিতকে স্মরণ করেন। একই সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতা ছিলো বলেই নগরবাসীর উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ হয়েছে। মেয়র বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে সকল দল মতের নেতা ও মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়েছে। যেটা আমাদের দুই দলেরই রাজনীতিকরা অন্যভাবে দেখেন। আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটের এখনো অনেক কাজ বাকী। সেই কাজগুলো সম্পাদনে জনপ্রতিনিধি যেই দলেরই হোক তাকে সহযোগিতা করতে হবে।
টানা দুই মেয়াদে নগরীর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা দানের সকল ব্যর্থতার দায় নিজের কাধে নিয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সম্পীতির ঐতিহ্যকে ধারণ করে নির্মূহভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছি। গত দশ বছরে সিলেটকে একটি জনবান্ধব নগর প্রতিষ্ঠায় যেটুকু অর্জন হয়েছে তা আমি নগরবাসীকে উৎসর্গ করছি।
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সনতু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিসিকের প্যানেল মেয়র-১ কাউন্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক, বিশিষ্ট রাজনীতিক বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউর রহমান পীর, সিলেট ডায়বেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট রাজনীতিক লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অশোক পুরকায়স্থ, রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের অধ্যক্ষ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ, সিলেট প্রেস বিটারিয়ান চার্চের ফাদার ডিকন নিঝুম সাংমা, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিলেট ব্যুরো প্রধান শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল। নাগরিক সংবর্ধনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিসিক কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান আজাদ ও কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের পক্ষ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দেয়া মানপত্র পাঠ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ। প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড .এ কে আব্দুল মোমেন এমপি ও সিসিকের কাউন্সিলরগণ নাগিরক সংবর্ধনা পাওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর হাতে মানপত্র, সম্মাননা স্মারক ও নগর ভবনের একটি প্রতীকি চাবি তুলে দেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে মেয়র কাউন্সিলরগণ সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা জসীম উদ্দিন, গীতা পাঠ করেন সিসিকের কর সহকারি কর কর্মকর্তা জ্যোতিষ চক্রবর্তী।