ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে নিহত বেড়ে ২ হাজার ৮শ’র বেশী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩৩:৫১ অপরাহ্ন
# গাজার বাসিন্দাদের সরে যেতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ইসরাইলের
# ফিলিস্তিনিরা জন্মস্থান ছেড়ে কোথাও যাবে না, জানিয়েছে হামাস
ডাক ডেস্ক : ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ। এই নিহতদের মধ্যে ইসরাইলি সেনা ও হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি দুই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী, শিশু, বেসামরিক লোকজন এবং বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। অপর দিকে, গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৫৩৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ৬১২ জন।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমেও ইসরাইলি বাহিনীর হামলা চলছে । সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৬ জন।
এদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিমতীরে গতকাল শুক্রবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার সঙ্গে সংহতি প্রকাশের সমাবেশে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং একাধিক স্থানে প্রায় ১৩০ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
অপরদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের সরে যেতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। তবে হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মস্থান ছেড়ে কোথাও যাবে না। এ ছাড়া ইসরাইলের আল্টিমেটাম উপেক্ষা করে দেশটিতে আরও অন্তত ১৫০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে সংগঠনটি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গতকাল শুক্রবার জানিয়েছে, ইসরাইল যখন ভূমি থেকে অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ফের রকেট হামলা শুরু করেছে হামাস।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জনিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের বাস্তুচ্যুত ও লক্ষ্যবস্তু করার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের আশকেলন শহরের দিকে ১৫০টি রকেট ছোঁড়া হয়েছে।
এছাড়াও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ ও জর্ডানে বিক্ষোভ হয়েছে। শিয়া নেতা মোক্তাদা আল সদরের আহ্বানে বাগদাদের তাহরির স্কয়ারে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেন।
একইভাবে ইসরাইল সীমান্তের দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জর্ডানের শত শত নাগরিক। এর আগে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, গত ছয় দিনে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন মার্কিন নাগরিক।
২০২১ সাল থেকে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শেষে গত শনিবার ভোর রাত থেকে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট ছোঁড়া শুরু করে গাজা ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাসের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সূর্যের আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই ৩ হাজারেরও বেশি রকেট ছোঁড়া হয়েছিল ইসরাইলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে।
কাছাকাছি সময়ে মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডারে চেপে হামাসের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমা-ের কার্যালয়ে গিয়ে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের বন্দি ও জিম্মি করার পাশাপাশি ওই কমান্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড ও অন্যান্য শাখার কার্যালয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল ও জীপে করে সীমান্ত পেরিয়ে ইসরাইলে প্রবেশ করেন হামাসের আরও কয়েক শ’যোদ্ধা।
গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি ও পূর্বপ্রস্তুতি না থাকার কারণে হামাসের হামলার পর প্রথম দিকে খানিকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিল ইসরাইল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধে পূর্ণ শক্তিতে ফিরে আসে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ হচ্ছে আল আকসা অঞ্চলে। ইসরাইল সরকার ইতোমধ্যে হামাসকে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।