গ্রামিণ নারী দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ৭:৫৪:৩৩ অপরাহ্ন
সম্পন্ন করার আগে সবকিছুই অসম্ভব মনে হয়। – নেলসন ম্যান্ডেলা।
বিশ্ব গ্রামিণ নারী দিবস আজ। গ্রামিণ নারীদের অধিকার সচেতন করবার পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দিবসটি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে গোটা নারী সমাজই বঞ্চনা অবহেলার শিকার হচ্ছে। তারা শিকার হচ্ছে নির্যাতনের। তারা বঞ্চিত চাকুরির ক্ষেত্রে, বেতন-মজুরির ক্ষেত্রে। এ দেশে বেকারের সংখ্যা তিন কোটির ওপরে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই নারী। গ্রামিণ নারীদের অবস্থা আরও করুণ। অশিক্ষা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার কুরে কুরে খাচ্ছে গ্রামিণ নারীদের। অথচ আমাদের সংবিধান নারী অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে- সকল নারীই রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে।
২০০৭ সালের ১৮ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১৫ই অক্টোবরকে বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০০৮ সাল থেকে এর সদস্য দেশগুলো এই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এই দিবসের সফলতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন আইন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির ফলে গ্রামিণ নারীদের বৈষম্যের হারও দিন দিন কমে আসছে। অপরদিকে গৃহস্থালীর কাজসহ গ্রামিণ নারীরা কৃষি কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। অথচ নারীর গৃহস্থালীর কাজকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। অবশ্য নারী উন্নয়নে সরকারের কিছু যুগান্তকারি উদ্যোগ রয়েছে। মেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। তারা বিনাবেতনে লেখাপড়া করতে পারছে। পাচ্ছে বৃত্তিও। তারপরেও মেয়েদের লেখাপড়ার হার প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে না। আবার শিক্ষিত অনেক নারী উপযুক্ত চাকুরি পাচ্ছে না। অর্থাৎ শিক্ষিত মেয়েদের চাকুরির নিশ্চয়তা নেই; আবার অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত কোটি কোটি নারীর মধ্যে বেকার ৯০ শতাংশই। তাছাড়া, গ্রামীণ নারীরা যৌতুক, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা পাচারেরও শিকার হচ্ছে। বছরে কমপক্ষে ১৫ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে।
তারপরেও আমরা আশায় বুক বাঁধতে চাই। সময় পাল্টাচ্ছে। সচেতন হচ্ছে মানুষ। গ্রামিণ জীবনে লাগছে শহুরে ছোঁয়া। জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তনে সরকারও বদ্ধপরিকর। গ্রামিণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটছে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিভাবকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। গ্রামিণ অনগ্রসর পরিবারের মেয়েরাও আজকাল উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গ্রামিণ নারীদের সুযোগপ্রাপ্তি আশানুরূপ নয়। গ্রামীণ শতভাগ গর্ভবতী নারীকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়ার অঙ্গীকার রয়েছে সরকারের। বর্তমানে এই হার ৫০ শতাংশের নিচে। সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে নারীদেরই। দরকার চাকুরিক্ষেত্রে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ। বিশ্ব গ্রামিণ নারী দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, গ্রামিণ কোটি কোটি নারী নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে।