ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের মধ্যেই গাজা ছাড়ছে ফিলিস্তিনিরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ৪:০৭:১২ অপরাহ্ন

# ‘দেরি’ হওয়ার আগে ইসরায়েলকে থামতে বললো ইরান
ডাক ডেস্ক : গাজায় প্রথম দফায় স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী এই অভিযানকে ‘স্থানীয় অভিযান’ বলে অভিহিত করছে।
ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছে, পদাতিক ও সাঁজোয়াবাহিনীর সদস্যরা এসব অঞ্চলগুলোতে অভিযান চালিয়েছে মূলত লুকিয়ে থাকা হামাস সদস্য, তাদের অবকাঠামো ও বিভিন্ন সেলগুলো শনাক্ত করার জন্য।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে নিখোঁজ ইসরাইলিদের খোঁজে এবং হামাসের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ গাজা উপত্যকার উপকণ্ঠে এলাকা কেন্দ্রিক অভিযান চালিয়েছে। এই সময় এক জন হামাস সদস্য অভিযান পরিচালনাকারীদের উপর অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেট মিসাইল ছুঁড়লে তাকে হত্যা করে আইডিএফ। অভিযানে নিখোঁজ ইসরাইলিদের দেহাবশেষ উদ্ধারের খবরও জানিয়েছে তারা।
এছাড়া, গতকাল শনিবার জেরুজালেমের পাশে কালান্দিয়া শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে, প্রাথমিকভাবে এ অভিযানে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। উত্তর গাজা থেকে সরে যেতে ৬ ঘণ্টার নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জাতিসংঘকে বলেছিল, ওয়াদি গাজার উত্তরে বসবাসকারী প্রত্যেকের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় সরে যাওয়া উচিত।
৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ৩০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এ হামলার পরপর হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করে গাজায় পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি ২৩ লাখ মানুষের গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
টানা সাত দিনের বিমান হামলার পর শুক্রবার রাতে উত্তর গাজা খালি করতে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় ইসরায়েল। এরপর সে সময় পার হলে তারা গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বাড়ায়।
ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জোনাথন কনরিকাস বলেছেন, গাজা উপত্যকার চারপাশে সেনা জড়ো করা হয়েছে। তারা পরবর্তী অভিযানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
তবে উত্তর গাজা ছেড়ে না যেতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। তারা বলছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে সড়ক পর্যন্ত নিরাপদ নয়। শুক্রবার শরণার্থী বহনকারী গাড়ি ও ট্রাকে ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। তবে হামাসের এমন দাবি অস্বীকার করে ইসরায়েল বলছে, হামাস এসব মানুষকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এমন আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া।
গতকাল শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
ইসমাইল হানিয়া বলেন, মার্কিন প্রশাসন ও কিছু ইউরোপীয় দেশের সহায়তায় আমাদের শত্রুরা এই কাজ (গণহত্যা) করছে।
গাজার বাসিন্দারা তাদের ভূমিতে অবস্থান করছে। তারা কখনোই গাজা ছেড়ে যাবে না, বলেন তিনি।
হামাস প্রধান বলেন, ইহুদীদের বর্বর মারণাস্ত্রের সম্মুখীন গাজার বাসিন্দাদের আমি স্যালুট জানাই। তারা তাদের ভূমি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইহুদী শাসকরা সব ধরনের অপরাধে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও হামাস বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ইচ্ছুক নয়, বলেন তিনি।
ইসমাইল হানিয়া আরও বলেন, হামাস হলো একটি স্বাধীনতাবাদী আন্দোলন, যারা এই নীতিগুলো মেনে চলে।
এদিকে, ‘খুব দেরি’ হওয়ার আগেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে ইরান। একইসঙ্গে দেশটি সতর্ক করেছে, লেবাননের হিজবুল্লাহ যোগ দিলে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গতকাল শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈরুতে সাংবাদিকদের বলেন, লেবাননের হিজবুল্লাহ যুদ্ধের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছে। ইসরায়েলের উচিত অবিলম্বে গাজায় তাদের আক্রমণ বন্ধ করা।
আমির-আব্দুল্লাহিয়ান জানান, তিনি হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হিজবুল্লাহ যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে সে বিষয়ে আমি জানি। তবে, তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে ইহুদিবাদী সত্তায় বিশাল ভূমিকম্প সৃষ্টি হবে।
প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার ২১৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছে। এর মধ্যে ৭২৪ জন শিশু রয়েছে। এছাড়াও আহত হয়েছে আট হাজার ৭১৪ জন।
অপরদিকে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত তিন হাজার ৪০০ জন।