ধ্বংসের মুখে নগরীর নৃসিংহ জিউর আখড়া সংস্কারের দাবি বিশিষ্টজনদের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ৬:০৫:৪৯ অপরাহ্ন
সুনীল সিংহ :
‘শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়া’ জরাজীর্ণ অবস্থায় প্রায় ধ্বংসের মুখে রয়েছে। আখড়াটি নগরীর প্রাণকেন্দ্র সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিঘাটে অবস্থিত। আখড়াটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্কারের অভাবে এ করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বহীনতার কারণে আখড়াটির সংস্কার ও আধুনিকায়নের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এজন্য সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্ত-অনুরাগীদের মনে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
‘শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়া’ সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্ত-অনুরাগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে- এই আখড়াটি প্রাচীনকালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। একসময় এই আখড়ায় প্রতিদিন পূজার্চ্চনা হতো। অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর উপস্থিতিতে মুখর থাকতো এই আখড়া প্রাঙ্গণ। কালের বিবর্তনে আজ আখড়াটির সেই জৌলুস আর নেই।
অনেকদিন ধরে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আখড়াটি আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই নাটমন্দিরে পানি গড়িয়ে পড়ে। দেয়ালের পলেস্তেরা খসে পড়ছে। যে কোনো সময় আখড়াটি ধসে পড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে আখড়াটি সংস্কারের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর কাজের আর অগ্রগতি হয়নি। আখড়াটি পরিচালনার জন্য কোনো কমিটিও নেই বলে জানা গেছে। বর্তমানে আখড়াটির অনেক জায়গা-সম্পত্তি ভূমিখেকো চক্র জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে।
একটি সূত্র জানায়, শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়াটির সংস্কার ও উন্নয়ন করার জন্য ৪ বছর আগে একটি ‘উন্নয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির সভাপতি ছিলেন এডভোকেট গৌতম দাস ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রকৌশলী গৌতম দে। তারপর সেই কমিটি কাজের কাজ কিছুই করেনি।
জানা যায়, নানা জটিলতায় সেই কমিটি শতভাগ ব্যর্থ হয়। নৃসিংহ জিউর আখড়ার কাছ থেকে ১২ জন ব্যক্তি ১২টি দোকান ও গুদামঘর ভাড়া নেন। অথচ মাত্র ২ জন প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন। বাকি ১০ জন ভাড়া না দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে আছেন দোকান ও গুদামঘর। বর্তমানে আখড়াটিতে ১৫ শতক জায়গা দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এই প্রাচীন আখড়াটির পাশেই শ্রীশ্রী দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির, প্রাচীন শিব মন্দির ও শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের মন্দির রয়েছে। শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়ায় ‘যমুনা’ নামে একজন বয়ষ্ক বৈষ্ণবী রয়েছেন। যিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী কোনো রকমে শ্রীশ্রী নৃসিংহদেবের পূজার্চ্চনা করে আসছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা জানান, ধর্মীয় পবিত্র স্থানটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন একটি কমিটি গঠন করা, মন্দিরের বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধার ও মন্দির সংস্কার করে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, ‘সিলেট নগরীর শ্রীশ্রী নৃসিংহদেবের আখড়াটি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা সময়ের দাবি। প্রাচীন এই আখড়াটিকে রক্ষার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্মীয় পবিত্র স্থানটিকে সকলে মিলেমিশে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘বাংলাদেশে দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, দেবালয়-এর সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ফলে দেবোত্তর সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে। নগরীর কালিঘাটের ঐতিহ্যবাহী ‘শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়া’ কে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আর এর জন্য একটি দক্ষ পরিচালনা কমিটি গঠন করা জরুরী বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম মুনিম জানান, ‘মন্দির সংস্কার বা সংরক্ষণের ব্যাপারে কেউ কোনদিন আসেনি। তিনি আরো জানান, সিটি কর্পোরেশনে এ ব্যাপারে আবেদন থাকলে সেটা অন্য বিষয়। আর মন্দির সংস্কারের জন্য সিটিতে আবেদন করলে অবশ্যই সহযোগিতা করবো।’
নৃসিংহ জিউর আখড়াটির সেবায়িত এডভোকেট গৌতম দাস জানান, ‘আমি সব সময় চেষ্টা করছি এই আখড়াটি সংস্কার করার ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার। এক্ষেত্রে আমার আন্তরিকতার শেষ নেই। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে নৃসিংহ জিউর আখড়াটি সংস্কার করা যাচ্ছে না। উন্নয়ন-অগ্রগতির কাজ থমকে আছে।’ তিনি বলেন, ‘সনাতন ধর্মের যে কেউ উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করলে তাকে আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। আমি চাই, নৃসিংহ জিউর আখড়াটি সংস্কার ও আধুনিকায়ন হোক।’
আখড়ার পূজারী বৈষ্ণবী যমুনা জানান, ‘শ্রীশ্রী নৃসিংহদেবের এই আখড়াটি দীর্ঘদিন ধরে চরম অযতœ-অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। আমি দ্রুত এই আখড়াটির সংস্কার দাবি করছি। ভগবানের মন্দির সুন্দর রাখলে আমাদের সবার মঙ্গল হবে।’