জমির উর্বরতায় ঘাটতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ৭:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন
জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষে না পৌঁছা পর্যন্ত থেমো না। -স্বামী বিবেকানন্দ
কৃষিজমির উর্বরতা কমছে। বিশেষ করে, আধুনিক কৃষিব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে মাটিতে মৌলিক উপাদানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে কমছে মাটির উর্বরতা। বর্তমানে দেশে কৃষিজমির ৭৫ শতাংশই উর্বরতা ও পুষ্টির ঘাটতি সংবলিত। এই অবস্থায় কৃষি উৎপাদন পুরোটা সারনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। তাই মাটির জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এর উর্বরতা বজায় রাখার উদ্যোগ নেয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষি উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে কৃষিজমির উর্বরতা তথা ফসল উৎপাদন ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে মাটির স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটির স্বাস্থ্যের সঙ্গে মানবস্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে। আর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা। এটাই বাস্তবতা যে, বাংলাদেশের কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উত্তরণ ঘটছে। যা অতীতে ছিলো ¯্রফে খোরপোশ কৃষি। মাটির মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে যেসব উপাদান রয়েছে, সেগুলো স্বাভাবিক পর্যায়ে না থাকলে ফসল উৎপাদন বিঘিœত হবে। ফসল উৎপাদনের জন্য মাটিতে কমপক্ষে ১৭টি মৌলিক উপাদান থাকা প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে- কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, মলিবডেনাম, বোরন, কপার, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ও ক্লোরিন। এসব উপাদানের কোন একটির অভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন সঠিকভাবে হতে পারে না। ফলে ফসলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, মাটিতে উল্লিখিত উপাদানগুলোর ঘাটতি প্রথম ধরা পড়ে ১৯৫১ সালে। তখন মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। পরে ১৯৫৭ সাল থেকে ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয় ফসফরাস। এভাবে ঘাটতির তালিকায় পটাশিয়াম ১৯৬০ সালে, সালফার যুক্ত হয় ১৯৮০ সাল, জিংক যুক্ত হয় ১৯৮২ সাল, ১৯৯৫ সালে বোরন ঘাটতি দেখা দেয়। আর ২০০০ সাল থেকে ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয় আরও আটটি উপাদান। গবেষণায় ওঠে এসেছে, ২০০০ সালে দেশে উর্বরতার ঘাটতিযুক্ত জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ হেক্টর। ২০২০ সালের মধ্যে দেশে উর্বরতা বা পুষ্টি ঘাটতিযুক্ত ভূমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ১১ লাখ হেক্টরে।
অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ কৃষিজমিতেই পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। এক কথায় ৮০ শতাংশ কৃষি জমির জৈব উপাদান কমে গেছে। যার ফলে ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় মাটির গুণমান পরীক্ষা করে পরিমিত মাত্রায় সুষম সার প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। জোর দিতে হবে জৈবসার প্রয়োগের ওপর। তা না হলে কৃষিতে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেটা ধরে রাখা সম্ভব হবে না।