ইসরায়েলী বর্বরতায় রক্তাক্ত গাজা স্ট্রিপ অ্যাডভোকেট আনসার খান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ৭:৪৬:৩১ অপরাহ্ন
‘বিশ্বের বৃহত্তম উম্মুক্ত কারাগার’ হিসেবে অভিহিত ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার চওড়া গাজা স্ট্রিপে বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরায়েলি বর্বর বাহিনীর সামরিক ও বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় গাজা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এর ফলে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় ও সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন গাজার প্রায় ২.৩ মিলিয়ন মুসলমান বাসিন্দারা।
ইসরায়েল গাজা ও পশ্চিম তীরে ১৯৬৭ সাল থেকে জোরজবরদস্তি সামরিক দখল অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ এবং ফিলিস্তিনীরা তাদের ভূখ- ইসরায়েলী দখলমুক্ত করার জন্য সংগ্রাম ও সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে এবং প্রায়ই পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত হতে দেখা যায় এবং বর্তমানে চলমান সংঘর্ষও তার-ই অংশ।
প্রকৃতপক্ষে, ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরায়েলের নিপীড়ন-নির্যাতন ও সামরিক শক্তি প্রয়োগ যতটা বেশি কঠোর হবে, ততই প্রতিহিংসার আগুনও বাড়তে থাকবে ফিলিস্তিনের জনগণের মধ্যে এবং ততই রক্তাক্ত হবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের জনপদ। কিন্তু রক্তপাত কখনো সংঘাতের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করবে না, বরং গোটা অঞ্চলকে অস্থির-অস্থিতিশীল করে রাখবে।
জাতিসংঘের প্রস্তাবিত দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক স্বাধীন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার, সমাধানে ইসরায়েলের অস্বীকৃতির কারনে অর্থাৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি ইসরায়েল অস্বীকার করায়, জোর করে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আটকে দিয়ে ফিলিস্তিনীদের ওপর নিপীড়ন ও আধিপত্যের ব্যবস্থা, যার মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক বিভক্তকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ ও নিয়ন্ত্রণ, জমি ও সম্পত্তি দখল করে ইসরায়েলীদের জন্য বসতি স্থাপন, এবং ফিলিস্তিনীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অস্বীকার ইত্যাদি কারনে এই সংঘাত ও সংকটের জন্য মূলত ইসরায়েল-ই দায়ী। এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
গত ০৭ অক্টোবর শনিবার ভোরে ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আচমকা ও আকস্মিক সামরিক রকেট হামলা প্রসঙ্গে ইসরায়েলীরা এই দিনটিকে ‘দ্বিতীয় ইয়োম কিপ্পুর’ বলে অভিহিত করেছে, ১৯৭৩ সালে মিশর ও সিরিয়ার দ্বারা ইসরায়েল আশ্চর্যজনক হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে। হামাসের গত সাত অক্টোবরের রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েল সর্বশক্তি দিয়ে গাজার জনগণের ওপর বিমান আক্রমণের পাশাপাশি সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে এবং ওখানকার একমাত্র পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে , সমস্ত বিদ্যুৎ, খাবার এবং পানি সরবরাহ সহ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ ব্যবস্থা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে বাইরে থেকে কোনোও সাহায্য আসতে পারছে না গাজায় এবং এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২০,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। বাস্তুচ্যুত লোকজনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। অন্যদিকে, হতাহতের সংখ্যাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত ১৪০০ ফিলিস্তিনী এবং ১৩০০ জনেরও বেশী ইসরায়েলী ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। মোটকথা, ইসরায়েল এবং গাজায় আমরা যে দৃশ্যগুলো দেখতে পাচ্ছি তা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের একটি নতুন অধ্যায় চিহ্নিত করেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিণতি এবং মাত্রা ইতিমধ্যেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেছে, যা শুরু হয়েছে, প্রায় অনিশ্চিতভাবে তা হলো পরবর্তী যুদ্ধ, যেটি হবে রক্তক্ষয়ী, ব্যয়বহুল এবং যন্ত্রণাদায়কভাবে অনাকাক্সিক্ষত হতে পারে তার গতিপথ এবং ফলাফল।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই ছিটমহলে ইসরায়েলের জোরদার স্থল ও বিমান হামলার লক্ষ্য হলো হামাসকে সম্পূর্ণ মূলোৎপাটন করা এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে পুরো বিজয় অর্জনের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ‘দীর্ঘায়িত এবং বেদনাদায়ক হবে।’ মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ সশস্ত্রবাহিনী প্রতিরক্ষার সমস্ত সুবিধা কাজে লাগানোর সমস্ত কৌশল ব্যবহার করতে পারে ইসরায়েল যুদ্ধে হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য। ইসরায়েলের জন্য এটি অত্যন্ত বিপদজনক, জটিল ও চ্যালেঞ্জিং একারণে যে, বিজয় অর্জনে কতটা সময় লাগবে, কতটা শক্তিশালী হামাস বাহিনী এবং কতপরিমাণ কিধরণের সমরাস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হাতে আছে, কতসংখ্যক ফিলিস্তিনী ও ইসরায়েলীর জীবনের বিনাশ ঘটবে বা কত মানুষ আহত হবে বা বসতি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে বিতাড়িত হবে নিজের স্বদেশ থেকে তার পূর্বানুমান করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না। তবে এই ‘যুদ্ধটি খুব রক্তাক্ত হতে চলেছে,’ বলেছেন জন স্পেনসার, প্রাক্তন আমেরিকান মেজর, যিনি ওয়েস্ট পয়েন্ট নামে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
মিলিটারি একাডেমির মডার্ন ওয়ার ইনস্টিটিউটে শহুরে যুদ্ধ বিষয়ে গবেষণা করেন।
অন্যদিকে, উভয়পক্ষের এই যুদ্ধটি সীমানা ছাড়িয়ে আঞ্চলিক বা বিশ্বব্যবস্থার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে নিয়ে যায় কি-না তা-ও কারো পক্ষে এখনি বলে দেওয়া সম্ভব হবে না। এগুলো নির্ভর করছে এই যুদ্ধে বাইরের দেশগুলোর ভূমিকা কেমন হবে তার ওপর। তবে আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কায় ইসরায়েলকে সংযম রাখার আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইতজাক ব্রিক সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, ‘যদি একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয় এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত না হই, তাহলে বিপর্যয় শতগুণ বেশি হবে… গাজায় একটি সামরিক অভিযান সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে, পাঁচটি ফ্রন্টে। জেনারেল ব্রিকের মতে এটি একটি বহুমুখী যুদ্ধ হবে, যাতে শুধু হিজবুল্লাহ ও লেবানন, পশ্চিম তীর, সিরিয়া, ইরান নয়, বরং ইসরায়েলের শহরগুলোতেও সম্প্রসারণ হবে যুদ্ধের দাবানল।
এই যুদ্ধ, স্থলে যেমন অত্যন্ত কঠিন হবে, তেমনি আকাশ থেকেও কঠিন আক্রমণ হবে। কারণ এটি নিশ্চিত করে বলা যায়, হামাস বাহিনী বা ইসরায়েল, কেউ-ই ১৯৮০-এর দশকে যা ছিলো, এখন আর তেমনটি নয়, বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে উভয়ই। এখন উভয়পক্ষই পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হওয়ার মতো শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠেছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে আরব ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসরায়েল বিরোধী জনমত কঠোর হয়েছে, যা হামাস ও ফিলিস্তিনী জনগণের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়ক শক্তি হিসেবে সহযোগিতা করছে। এটিও সত্য যে এখন আরব এবং মুসলিম দেশগুলোও আশি-নব্বইয়ের দশকের চেয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে এবং ওই দেশগুলোর কোনো কোনোটা, বিশেষকরে, ইরান, যেটি হামাসের ইসরায়েলের ওপর আচমকা হামলার পেছনে জড়িত বলে ইসরায়েলীরা মনে করে সেটি যদি ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তবে যুদ্ধের গতিপথ বা চিত্র বদলে যেতে পারে এবং কোনো কোনো আরব ও মুসলমান রাষ্ট্র যে ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, তা বলা যায় এবং অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তো ইসরায়েলের পক্ষে আছে এবং একসময় সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ এই যুদ্ধ একটি বহুমুখী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এমন অবস্থার উদ্ভব হলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা বিপর্যয়কর হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান আছে এবং অনুরূপ যুদ্ধ গোটা বিশ্বব্যবস্থার নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করবে।
তবে আঞ্চলিক যুদ্ধের তাৎক্ষণিক কোনো হুমকি না থাকলে-ও, মধ্যপ্রাচ্যের সদা পরিবর্তনশীল গতিশীলতা দ্রুত স্থিতাবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারে এবং আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করতে পারে বলে রাজনীতি ও যুদ্ধ কৌশল বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিশ্বের তেল উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। আর ওই অঞ্চলটি বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাস সরবরাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা বিশ্বের তেল উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং বিশ্বের গ্যাস উৎপাদনের ২০ শতাংশ উৎপাদনে অবদান রাখে। এই ভৌগোলিক অঞ্চলটি হরমুজ প্রণালী, সুয়েজ খাল এবং বাব-এল-মানদেব প্রণালী সহ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তেল-গ্যাস পরিবহন পথের উৎসস্থল। এই প্যাসেজগুলো পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগরকে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হিসেবে কাজ করে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হলে তেল, গ্যাস উৎপাদন ও বিশ্বে তার পরিবহন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার শঙ্কা সহ তেল-গ্যাসের দামও বেড়ে যাবে, যা বিশ্বব্যবস্থার জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ও বিশ্বব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হুমকি হয়ে ওঠবে।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বর্তমানে চলমান সংঘাত ও বিরোধ, যা ফিলিস্তিনী রাষ্ট্রত্ব, ভূমি, ফিলিস্তিন ভূমিতে অবৈধভাবে ইহুদি বসতি নির্মাণ, জেরুজালেমের ওপর অধিকার সংক্রান্ত এবং ফিলিস্তিনী উদ্বাস্তুদের চারপাশে আবর্তিত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আন্তর্জাতিক এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি কাঁটা হয়ে আছে। তাই এই চলমান যুদ্ধ শুধু ঐতিহাসিক তাৎপর্যই বহন করে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবও বহন করে।
ফিলিস্তিনীদের জন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনী জনগণ সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন। তবে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতৃত্বের মধ্যে মতাদর্শগত ও কৌশলগত দ্বন্দ্ব, বিশেষকরে, হামাস ও ফাতাহ তথা পিএলএ এর মধ্যে বিরোধ, এককভাবে ফিলিস্তিন জনগণের নিকট এবং বিশ্বপরিমন্ডলে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের অনুপস্থিতি, আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোরালো ভূমিকা না থাকা, আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতির অভাব ইত্যাদি নানা কারণে বিজয়ী হতে পারছেন না তারা। এই যে, হামাসের ইসরায়েলের ওপর আচমকা রকেট হামলার ঘটনায় গাজায় ইসরায়েলের প্রচন্ড আক্রমণ, মুসলমানদের হত্যা করার ঘটনায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নির্বিকার থাকা এবং স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর মধ্যেই ফিলিস্তিনী জনগণের নিদারুণ হতাশার দিকটি ফুটে ওঠেছে, স্বাধীনতার প্রশ্নে, নেতৃত্বের বিষয়ে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতার যোদ্ধা নেতৃত্ব ও এর জনগণ যে ঐক্যবদ্ধ নয়, তার প্রমাণ বহন করছে এবং এই অনৈক্য ইসরায়েলের জন্য বড় সূযোগ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্থাৎ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান অস্বীকার করার। ক্রমেই ফিলিস্তিনী ভূমি দখলে নিয়ে একক ইসরায়েলী রাষ্ট্র (এক রাষ্ট্র, দুই জাতি ভিত্তিক) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে ইসরায়েলীরা।
তাই স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে জয়যুক্ত হতে হলে ফিলিস্তিনী সকল দল ও গোষ্ঠীকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একক নেতৃত্বের অধীনে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। সকল আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো, যেমন- মিশর, আরব আমিরাত, জর্ডান, ওমান, সৌদি আরব, তার্কিয়ে (তুরস্ক) সুদান প্রভৃতি রাষ্ট্রসমূহ ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে ইহুদি রাষ্ট্রটিকে মজবুত করছে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনী স্বাধীনতার যুদ্ধ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তারপরেও এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, সকল কলাকৌশল প্রয়োগ করেও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনগণের আকাক্সক্ষা দমিয়ে রাখা যাবেনা, স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা একবার জন্ম নিলে তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এর সমাপ্তি ঘটে। এই কারণে ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের দমন করা যাবেনা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া। যতোদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কায়েম না হবে, ততোদিন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে সামরিক সংঘাত চলতেই থাকবে, গোটা মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি বিশ্বব্যবস্থা নিরাপত্তাহীন এবং অস্থিতিশীল থাকবে এবং এমনকি একসময় বিশ্বযুদ্ধেরও কারণ হতে পারে। তাই ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা বিশ্বব্যবস্থার নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের প্রস্তাবিত দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক ফর্মুলায় অবিলম্বে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যেকার সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে। নতুবা ভোগতে হবে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে। ইসরায়েলের যদি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে টিকে থাকার অধিকার থাকে, সেক্ষেত্রে ফিলিস্তিনী জনগণেরও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রাষ্ট্র নিয়ে টিকে থাকার অধিকার রয়েছে,-এই সত্যটি সবাইকে মেনে নিলেই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : মডার্ন ডিপ্লোম্যাসি, দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স, আইপিএস জার্নাল, সিএনবিসি নিউজ, টাইমস ম্যাগাজিন।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।