খাদ্য পরিস্থিতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৫৬:১৫ অপরাহ্ন
স্বপ্ন সেটা নয় যেটা মানুষ, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেটাই যেটা পূরনের প্রত্যাশা, মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।
– এ পি জে আব্দুল কালাম।
সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি কোন অবস্থায় এটা কমবেশি সবার জানা। খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি খুবই স্পষ্ট যে, আমাদের খাদ্য পরিস্থিতি অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় সন্তোষজনক নয়। যদিও বলা হচ্ছে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বার্ষিক গড় চাল উৎপাদন সাড়ে তিন কোটি মেট্রিকটন। এই উৎপাদন চার কোটি মেট্রিকটনে উন্নীত করার লক্ষে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সব ধরণের খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন বাড়ছে, অথচ মূল্যে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না।
খুশির খবর এটাই যে, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিগত বছরগুলোতে গৃহীত কার্যক্রমের ফলে সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭০ সালে দেশে যেখানে খাদ্য উৎপাদন ছিলো এক কোটি মেট্রিকটন, সেখানে বর্তমানে উৎপাদন সাড়ে তিন কোটি মেট্রিকটন এর বেশি। অথচ কৃষি জমি হ্রাস পেয়ে ইতোমধ্যেই অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারপরেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশে খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। আর এজন্য সরকারেরই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এদেশের কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর গবেষকদের বিভিন্ন ধরণের উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করায় দেশে ফসল উৎপাদনে রীতিমতো বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। আর এই সাফল্য এসেছে অনেক দিনের সাধনায়। কৃষি প্রধান এই দেশে কৃষকরা অতীত থেকেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল আবাদ করে দেশের মানুষের খাদ্যের সংস্থান করছেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষকরাও ব্যবহার করছেন আধুনিক প্রযুক্তি। ফলে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল। এই অবস্থায় কৃষকদের মর্যাদা ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির ওপর জোর দেয়া জরুরি। কৃষি জমি হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, এটা ঠিক, তবে যে হারে কৃষি জমি সংকোচিত হচ্ছে এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, পাশাপাশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হারও যদি অব্যাহত থাকে তবে হয়তো অচিরেই খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। কৃষি জমি শুধু কমছেই না, জমির উর্বরতাও কমছে। এছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
এই অবস্থায় জরুরি হচ্ছে আমাদের কৃষি জমি রক্ষা করা। কৃষি জমি অকৃষি খাতে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এই ব্যাপারে রয়েছে আইন; কিন্তু নেই এর কার্যকারিতা। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে উৎপাদনে সক্ষম নতুন নতুন জাতের ধান আবিষ্কৃত হচ্ছে। এগুলোর প্রসার ঘটাতে হবে। তাছাড়া, করোনা বিপর্যয় এবং সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলায় এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সেই আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সর্বোপরি উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে খাদ্যশস্যের মূল্য গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।