জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে সীরাতুন্নবী (সা:) মাহফিল
রাসুলুল্লাহ (সা:) ছিলেন কুরআনের প্রতিবিম্ব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৫০:৩১ অপরাহ্ন

আমাদের অনৈক্যের কারণেই মুসলমানরা মজলুম জাতি হিসেবে পরিচিত: দানবীর ড. রাগীব আলী
আমাদের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সা:) কে অনুসরণ করতে হবে: ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক
স্টাফ রিপোর্টার: কুরআনুল কারিম রাসূল (সা:) এর উপর তেইশ বছরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা:) ছিলেন কুরআনের প্রতিবিম্ব। আর তাঁর জীবন ছিল কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ তরজমা ও তাফসির। কাজেই যে কেউ তাফসিরের কিতাব অধ্যয়ন করতে চায়, তাকে অবশ্যই সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে। কারণ, কুর’আনের বহু আয়াত নাযিলের পেছনে এমন প্রেক্ষাপট রয়েছে, যা সরাসরি রাসূল (সা:) এর সিরাত এর সাথে সম্পর্কিত। সিরাতের জ্ঞান ছাড়া এই কুর’আনী আয়াতের মর্ম উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট অঞ্চলের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের বার্ষিক সিরাতুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্ণিং বডির সভাপতি উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী। প্রধান আলোচক ছিলেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক।
কলেজের ১নং লেকচার গ্যালারীতে আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এর অধ্যক্ষ ডাঃ আবেদ হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, মহানবী (সা.)-এর পবিত্র জীবনে নবী-রাসুলদের যাবতীয় মহৎ গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি ছিলেন ঐশী বাণী পবিত্র আল-কোরআনেরই জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি তার জীবনের সর্বক্ষেত্রে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিধান বাস্তবায়ন করে উম্মতকে দেখিয়েছেন। তিনি ছিলেন সততার মূর্তপ্রতীক। প্রতি মুহূর্তে তিনি সত্যকে লালন করেছেন। পুরো পৃথিবী যখন কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, চারদিকে জাহেলিয়াতের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল, বর্বরতার লু-হাওয়া যখন পৃথিবীকে ভারী করে তুলেছিল, এমন সময় তিনি অমানিশার অন্ধকার দূরে ঠেলে বিশ্বভুবনে সত্যের আলো জ্বেলে দিয়েছিলেন। আমরা তার দেখানো পথ থেকে সরে গিয়েছি বলেই আজ দিকে দিকে মুসলমানরা নির্যাতিত। আমাদের অনৈক্যের কারণেই মুসলিমরা আজ মজলুম জাতি হিসেবে পরিচিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর ইসলামের শত্রুরা বসে থাকেনি। যুগে যুগে তারা ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলতাও পেয়েছিল। ইসলামের ইতিহাসে এর অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আজ পর্যন্ত তারা অভিনব কৌশলে মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য অবিরাম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনে তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করা এখন সময়ের দাবি।
দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, রাসুল (সা:) এর জীবন চরিত আমাদের জন্য এক অনুপম আদর্শ। আমৃত্যু আমাদের সেই অনুপম আদর্শকে অনুসরণ করেই যেতে হবে। তাহলেই মিলবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক বলেন, আমরা যদি দাবি করি রাসুল (সা:) কে ভালোবাসি ; তাহলেই সিরাত পাঠ করতে হবে। কুরআন এবং হাদিস যদি অনুধাবন করতে চাই সেখানেও আমাদের সিরাত পড়তে হবে। দু:খ যন্ত্রণা হতাশা ঘুচাতে হলেও আল্লাহর রাসুলের সিরাত পড়তে হবে। আমাদের সঠিক প্রার্থনার বিষয়টি যাচাই করতে হলেও সিরাতের কাছে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, রাসুল (সা:) আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। অমুসলিমরাও রাসুল (সা:) কে সর্বোত্তম স্বীকৃতি দিয়েছে। তারাও কিন্তু রাসুলের সিরাত অনুসরণ করে জানতে পেরেছে। রাসুলকে বুঝতে পেরেছে। আমরা রাসুল (সা:)কে অনুসরণ করতে চাই। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে অন্তত ৪০টি জায়গায় তার রাসুলকে অনুসরণ করতে বলেছেন।
ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক আরো বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করলেই আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। রাসুলও আশ্বস্ত করেছেন আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই জান্নাত লাভের জন্য আমাদের রাসুলকে আদর্শ করতে হবে। ডাঃ মোঃ রাশেদুল হক আরো বলেন, আমাদের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সা:) কে অনুসরণ করতে হবে।
সীরাত মাহফিলে আলোচনায় অংশ নেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ এ কে এমন দাউদ, হাসপাতাল এর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তারেক আজাদ। উপস্থাপনায় ছিল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং এন্ড ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিষ্ট্রার ডাঃ ফজলুল হক সোহেল। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ২৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: আশফাকুল হক।
আলোচনায় অধ্যাপক ডাঃ তারেক আজাদ বলেন, আমাদের জীবনে রাসুলের আদর্শ মেনে চলা সহজ, কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী চলছি না। এর জন্য আমাদের আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।
অধ্যাপক ডাঃ এ কে এম দাউদ বলেন, রাসুল (সা:) এর জীবনী আমাদের চলার পাথেয়। তিনি আলো বিলিয়ে দিয়ে সমাজকে বদলে দিয়েছিলেন। সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। সর্ব বিষয়ে তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ডাঃ আবেদ হোসেন সবাইকে আল্লাহর রাসুলের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে জীবনকে বদলে দেয়ার আহবান জানান।