ছাতকে সুরমা নদীর উপর ১টিসহ সারাদেশের ১৫০ সেতু ও ১৪ ওভারপাস উদ্বোধন
বিএনপির কথা এবং কাজ সবই ধ্বংসাত্মক : প্রধানমন্ত্রী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের ছাতকে ১২৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুরমা নদীর উপর ৪০৩ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুসহ দেশের ৮টি বিভাগের ৩৯টি জেলায় ১ দিনে ১৫০ সেতু ও মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে নবনির্মিত সেতুগুলোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন এবং সড়ক পরিবহন চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন তিনি।
সিলেট বিভাগের ছাতক ছাড়াও সেতুগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০টি, ঢাকায় ৩২, চট্টগ্রামে ২৭, রাজশাহীতে ২২, খুলনায় ১২, বরিশাল ও রংপুরে ৮টি সেতু রয়েছে। তাছাড়া মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাসের মধ্যে ৮টি রাজশাহী বিভাগে এবং ৬টি রংপুরে। এ ছাড়া তিনি ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি বড় সেতু, কেউয়াটখালী সেতু এবং রহমতপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র, ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিসির ময়মনসিংহ বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহের কেউট খালি ও রহমতপুর সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির কথা এবং কাজ সবই ধ্বংসাত্মক বলে মন্তব্য করে এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কী দিয়েছে? তারা দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করেছে? তারা দেশের কতটুকু উন্নতি করেছে, সেটাই হলো বড় প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, তখনই এ দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার আদর্শ-পদাঙ্ক অনুসরণ আমরা করেছি। তার আদর্শ নিয়ে আমরা কাজ করেছি।
তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যতগুলো ব্রিজ, পুল ব্রিজ, রাস্তা-ঘাট আমরা করেছি সব হিসাব দিতে গেলে অনেক সময় লাগবে।
এ সময় উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের বর্ণনা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি, সেটা আমি বহুবার বলেছি। কারণ আমাদের গ্যাস অন্য দেশ কিনবে; আমি রাজি হইনি। খেসারত দিতে হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে পারিনি। জনগণের ভোট পেয়েছিলাম কিন্তু চক্রান্তের শিকার হয়েছিলাম। তার পরে দেশটার অবস্থা কী হয়েছিল? বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি অপশাসনের কারণে এ দেশে ইমার্জেন্সি ঘোষণা হয়। তার পর আসে আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সেই সময়টার কথা একবার চিন্তা করে দেখেন মানুষের কী দূরাবস্থা ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ ছিল না। বিএনপির আমল থেকে যে অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়েছিল এ দেশের মানুষের ওপর, তারই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যা হোক একটা পর্যায়ে ২০০৮ সালে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনের রেজাল্ট; ২০ দলীয় ঐক্যজোট বিএনপি-জামায়াত পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। পরে বোধ হয় রিইলেকশনে একটা৩০টা। ৩০০ সিটের মধ্যে তাদের প্রাপ্তি ছিল মাত্র ৩০টি সিট। এই হলো তাদের শক্তি, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা।
এখন তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন; নানা কথা বলে। সেটা নিয়ে আমি এখন সমালোচনা করতে চাই না কারণ অনেকগুলো ভালো কাজ করেছি ভালো কথাগুলো বলে যেতে চাই কিন্তু এদের কথা এবং এদের কাজ সবই ধ্বংসাত্মক। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আমি সতর্ক করতে চাই। আজকে এই উন্নয়নগুলো ধ্বংস করুক সেটা আমরা চাই না, যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬২ জন ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ কোটি টাকা প্রদান করে ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি চালু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু খাতের উন্নয়ন নিয়ে ‘উন্নয়ন দর্পণ’ নামে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এবং এর প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানও বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে।
এদিকে, ছাতক ও গোবিন্দগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, উদ্বোধন হওয়া ১৫০ সেতুর মধ্যে সুনামগঞ্জের ছাতকে নির্মিত ১২৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪০৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে সুরমা ব্রিজেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি ছাতকে সুরমা ব্রিজের ফলক উন্মোচন করেন।
সুরমা ব্রিজ উদ্বোধন উপলক্ষে ছাতক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ব্রিজের টোল প্লাজার কাছে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও আওয়ামীলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন এবং যুবলীগ নেতা আবুল মিয়ার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক, ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু, সিলেট সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহিদ মজনু, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আহমেদ, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন, জেলা পরিষদ সদস্য, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, পৌর সভার প্যানেল মেয়র তাপস চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপি বেগম, সালেহা বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন, গয়াস আহমেদ, আব্দুল হামিদ, বিল্লাল আহমদ, ইজ্জত আলী, সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল আবেদিন আবুল, কাজী আনু মিয়া, আহমদ আলী আপন, জসিম উদ্দিন মাস্টার, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা মুহিতুল ইসলাম, ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম। বক্তব্য রাখেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ছাতকের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন সোহাগ, ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট আশিক আলী, দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক, সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল হক। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ সরকুম ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন বাবুল রায়।
সভায় চান মিয়া চৌধুরী, সামসুজ্জামান রাজা, আব্দুল আউয়াল, কালিদাস পোদ্দার, ইশতিয়াক তানভীর, আবুল হাসনাত, সিরাজুল হক, মোশাহিদ আলী, আলা উদ্দিন, মুহিবুর রহমান তালুকদার টুনু, আসকির আলী, ছমরু মিয়া তালুকদার, নজমুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম কিরণ, খায়রুল হুদা, আব্দুর রহিম, সজিকুল ইসলাম বাবুল, সাবেক কমিশনার আছাব মিয়া, সৈয়দুল ইসলাম, আব্দুল জলিল, আবু হানিফা সায়মন, রঘু মনি সিংহ, মিলন সিংহ, মনজুর আলম, হাজী জয়নাল আবেদিন কৃপেশ চন্দ আব্দুল মালিক মেম্বার, আমতর আলী মেম্বার, সফিক আলী মেম্বার, কুহিন চৌধুরী, ফজলু মিয়া মেম্বার, সাদমান মাহমুদ সানি, সহিদুর ইসলাম, জাকির হোসেন, আব্দুস সাত্তারসহ ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, ছাতক পৌরসভা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।