শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু আজ মহাষষ্ঠী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৫৯:৪৮ অপরাহ্ন
সুনীল সিংহ
শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী আজ শুক্রবার। আজ থেকে শুরু হচ্ছে পূজার মূল পর্ব। মহাষষ্ঠীতে দশভুজা দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মাতৃরূপে আজ মন্ডপে মন্ডপে ঠাঁই নেবেন দেবী। শঙ্খ ধ্বনি, ধূপের সুঘ্রাণ ঢাক-ঢোলের সঙ্গে ভক্তি মন্ত্রে মেতে উঠবে পূজোমন্ডপ।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। যার ফলে জগতে ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম বসন্তকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। পরে রামচন্দ্র তাঁর পতœী সীতাদেবীকে উদ্ধারের জন্য শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই, শরৎকালের এই পূজাকে অকাল বোধন বলা হয়। বোধন মানে জাগ্রত করা বা জাগানো। বোধন হয় বেল গাছের তলায়। দেবতারাও বেল গাছের তলায় বোধন করেছিলেন। বেল গাছের অন্য নাম শ্রীবৃক্ষ। শ্রী অর্থ সম্পদ বা সৌন্দর্য। তাই, পূজারীরা সম্পদ বা সৌন্দর্য বা সংসারের উন্নতির জন্য, জ্ঞান ভক্তি লাভের জন্য বিল্ববৃক্ষের মূলে দুর্গাপূজার বোধন করেন। বোধনে ঘট স্থাপন করা হয়। ঘট হলো হৃদয়ের প্রতীক। ঘটের জলে যেমন প্রতিবিম্ব পড়ে, সেরকম ভক্তের হৃদয়েও মায়ের ভাব বা স্বরূপের ধারণা হয়। সেই ধারণা অনুযায়ী প্রতিমা তৈরি হয়।
অন্যদিকে, আবার এই প্রতিমা দেখেই ভক্তের মনের ভাব প্রকাশিত হয়। তাই, ভক্ত নিজের হৃদয়ে, ঘটে এবং প্রতিমায় মায়ের পূজা করে থাকেন।
আসুরিক শক্তির বিনাশ আর শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি লাভের জন্য সনাতন হিন্দু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে মা দুর্গার আরাধনা করে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে বিশ^ব্যাপী মঙ্গলধ্বনি দিয়ে মা দুর্গা এ সময় কৈলাশ ছেড়ে মর্ত্যে আসেন। দুর্গাপূজা হয় আশি^নের শুক্লা ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত।
আজ শুক্রবার কল্পারম্ভ। কল্পারম্ভ হলো পূজার পরিকল্পনা শুরু। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী এই তিন দিনে মায়ের বিশেষ পূজার সংকল্প বা পরিকল্পনা হয় এই কল্পারম্ভে। কল্পারম্ভ হতেই শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠ হয়ে থাকে। এ চন্ডীতে মায়ের পূজার দার্শনিকভাব ও প্রতিমায় বিশেষ করে মাটির প্রতিমায় পূজার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
দুর্গাপূজার অধিবাস হলো বিভিন্ন সুগন্ধি ও মাঙ্গলিক দ্রব্য স্পর্শ করে অতিথি বরণ করে নেয়ার মতো মা দুর্গাকে প্রতিমায় ও নবপত্রিকায় বরণ করে নেয়া। বোধনের পরেই প্রতিমায় মায়ের অধিবাস করার নিয়ম। আগামী ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
আগামীকাল শনিবার মহাসপ্তমী পূজা। শঙ্খ-ধ্বনি, উলুধ্বনি আর নব পত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে আগামীকাল শুরু হবে দেবী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধনা। দুর্গা পূজায় প্রতিদিনই অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হবে।
দেবী দুর্গার যে মূর্তি সচরাচর দেখা যায়- সেটি সপরিবারে দেবী দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী। দেবীর ডান দিকে উপরে লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ। বাঁ দিকে উপরে সরস্বতী ও নিচে কার্তিক। সেই সাথে রয়েছে তাদের বাহন পেঁচা, ইঁদুর, হংস ও ময়ূর। আর দেবীর কাঠামোর উপরে শিবের মূর্তি স্থাপন করা হয়।
এদিকে পূজা উপলক্ষে নগরীর পূজোমন্ডপগুলো সাজানো হয়েছে। নগরীর মাছুদিঘিরপারের ত্রিণয়নী, মণিপুরী রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, কাজলশাহ, মিরের ময়দান, জামতলা, তোপখানা, মাছিমপুর মণিপুরী পাড়া, মাছিমপুর কুরি পাড়া, চালিবন্দর, যতরপুর, মিরাবাজার, রায়নগর, সোনাতুলা, গোপালটিলা, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, নাইওরপুল এলাকার রামকৃষ্ণ মিশন, বলরাম জিউড় আখড়া, দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, ঝুমকা সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, আম্বরখানা, করেরপাড়া, পনিটুলা, আখালিয়া কালিবাড়ি, শেখঘাট, গোটাটিকর, জৈনপুর ও শিববাড়ির পূজোম-পগুলো পূজোর সাজে সাজানো হয়েছে।
এছাড়াও, নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও উপজেলা এবং জেলাসমূহে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৪শ ৮ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গতবছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সারাদেশে এবার বেড়েছে ২৪০টি।
এবছর সিলেট বিভাগে পারিবারিক, বারোয়ারি ও সর্বজনীন পূজোমন্ডপ (স্থায়ী ও অস্থায়ী) ২৭৭০টি। পুরো বিভাগে গত বছর থেকে এবার ৩৭টি বেশী পূজোমন্ডপ। আর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পূজা মৌলভীবাজার জেলায় ১০৩৬টি।
গত বছর ছিল সিলেট বিভাগে পারিবারিক, বারোয়ারি ও সর্বজনীন পূজামন্ডপ (স্থায়ী ও অস্থায়ী) ২৭৩৩ টি।
এবার সিলেট মহানগর ও জেলায় ৬১৭টি ম-পে পূজা আয়োজিত হবে। তার মধ্যে সর্বজনীন ৫৬৯টি, পারিবারিক ৪৮টি পূজোর আয়োজন হবে। যা গত বছর থেকে এবার ৬টি বেশি।
মহানগরীতে ১৫১টি পূজার মধ্যে সর্বজনীন ১৩৪টি ও পারিবারিক ১৭টি। জেলায় ৪৬৬টি পূজার মধ্যে সর্বজনীন ৪৩৫টি ও পারিবারিক ৩১টি।
জানা গেছে, মহানগরীর ৬টি থানা এলাকায় এবার মোট ১৫১টি পূজোমন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানা এলাকায় ৩৯টি, জালালাবাদ থানা এলাকায় ১৮টি, এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ৩৮টি, শাহপরান থানা এলাকায় ২৩টি, দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকায় ১৫টি ও মোগলাবাজার থানা এলাকায় ১৮টি।
আর জেলায় মোট ৪৬৬টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বজনীন ৪৩৫টি ও পারিবারিক ৩১টি। জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬৬টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩২টি, কানাইঘাট উপজেলায় ৩১টি, জৈন্তাপংর উপজেলায় ২৩টি, বিশ্বনাথ উপজেলায় ২৫টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩৯টি, জকিগঞ্জ উপজেলায় পূজা ৯৮টি, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫০টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ২৮টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৪০টি এবং ওসমানীনগর উপজেলায় ৩৪টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।