জৈন্তাপুরে দেবরের হাতে ভাবী খুন মামলার রায়
প্রবাসী ও তার স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ৫:০৭:২৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের জৈন্তাপুরে বড় ভাইয়ের স্ত্রী সোনারা বেগম (৫০) হত্যার ঘটনায় দেবর প্রবাসী আব্দুল করিম (৪১) ও তার স্ত্রী শিরিন বেগমকে (৩৩) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী আসামিদেরকে এই দন্ড দেন। দন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল করিম জৈন্তাপুর উপজেলার ফরফরা গ্রামের উমর আলীর পুত্র ও শিরিন বেগম হলেন আব্দুল করিমের স্ত্রী। তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এছাড়া পৃথক ধারায় আব্দুল করিম ও তার স্ত্রীকে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। দন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী শিরিন বেগম সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সিলেটের ডাককে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। পারিবারিক বিরোধের জের ধরে দেবর আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী মিলে বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে খুন করে।
জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার ফরফরা গ্রামের মো. ওয়াহাব আলীর সাথে তার সৎ ভাই দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা আব্দুল করিমের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে ওয়াহাব ও তার স্ত্রী এবং তাদের পক্ষে থাকা প্রতিবেশী তেরাব আলীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এর সূত্র ধরে ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুসল্লি তেরাব আলীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাত করে। তেরাব আলীর আর্তচিৎকারে সোনারা বেগম এগিয়ে গেলে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণভয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। কিন্তু আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে পেছনের রান্না ঘরের দরজা দিয়ে সোনারা বেগম পালাতে গিয়ে হুচট খেয়ে পড়ে যান। এ সময় সৎ ভাইয়ের স্ত্রী সোনারা বেগমকে উপুর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে আব্দুল করিম ও তার স্ত্রী শিরিনা বেগম।
হত্যাকান্ডের পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর নিহতের পুত্র জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে জৈন্তাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-২০(৯)২১।
তদন্তকারী কর্মকর্তা, জৈন্তাপুর থানার উপ-পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম গত বছরের ১৯ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ৬ অক্টোবর মামলাটি সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য (দায়রা ৯২৩/২২) রেকর্ড করা হয়। একই বছরের ১৯ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে মামলার ২৩ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর যুক্তিতর্কসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষে গতকাল সকালে দুই আসামির উপস্থিতিতে সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিলেট জেলার পিপি এডভোকেট মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। আসামি পক্ষে ছিলেন এডভোকেট আকমল খান।