শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৪৯:৩২ অপরাহ্ন
সুনীল সিংহ :
আজ রোববার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী। আজ কুমারী পূজাও। কুমারী পূজায় একজন বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবী জ্ঞানে তাকে পূজা করেন। আজ সকালে অষ্টমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। হবে সন্ধিপূজাও। এদিন বলিদানও হয়। সন্ধিপূজায় দেবী দুর্গাকে চন্ডীরূপে বা কালীরূপে পূজা করা হয়।
হিন্দু ধর্মমতে, পরমা প্রকৃতি স্বরূপা মহাদেবী, মহাদেবের পতœী। মার্ক-েয় পুরাণ মতে, দেবী মহামায়া, পরমবিদ্যা, নিত্যস্বরূপা, যোগনিদ্রা। দেবীদুর্গা জন্ম-মৃত্যু রহিতা মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মহাশক্তি বলে দুর্গাকে নিদ্রা, ক্ষুধা, লজ্জা, তুষ্টি, আহুনের দাহিকা শক্তি, সূর্যের তেজ, জলের শীতলতা, ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণ্যশক্তি, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয় শক্তি, তপস্বীর তপস্যাশক্তি, ক্ষমাবানের ক্ষমা শক্তি। পৃথিবী ধারণ ও শস্য উৎপাদন ক্ষমতা প্রভৃতি বলে স্তব করা হয়ে থাকে।
দেবী দুর্গা তার দশ হাতে দশ রকম অস্ত্র, এক পা তার বাহন সিংহের পিঠে আর এক পা অসুরের কাঁধে। তাকে ঘিরে থাকেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ আর কার্তিক।
অশুভ শক্তি লঙ্কারাজ রাবণ সীতাকে হরণ করে লঙ্কাতে নিয়ে যান। সীতাকে উদ্ধারের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অশুভ শক্তি রাবণকে পরাজিত করতে এই আরাধনা করেছিলেন শরৎকালে অকালে। শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। রাবণ বধের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অসময়ে এই শরৎকালে মা দুর্গাকে জাগিয়ে তুলতে আরাধনা করেছিলেন। তাই, অকালের এ পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত।
শরৎকালে শ্রীরামচন্দ্র দেবী দুর্গার কাছে একশ আটটি নীল পদ্ম দিয়ে মায়ের পূজা করেন। মাতৃভক্ত শ্রীরামচন্দ্র পূজায় বসে অঞ্জলি দেয়ার সময় দেখলেন নীল পদ্ম একটা কম, তখন ধনুক দিয়ে চোখ উঠিয়ে নীল পদ্মের সংখ্যা পূরণ করতে উদ্যত হলে দেবী দুর্গা এসে বাধা দেন এবং আশীর্বাদ করেন।
মা দুর্গার কাঠামোতে জগজ্জননী দুর্গা ছাড়াও লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, সিংহ ও অসুরের মূর্তি থাকে। এছাড়া পেঁচা, হংস, ময়ুর, ইদুঁর ও সবার উপরে শিবের মূর্তি বিদ্যমান।
মা দুর্গার দশটি হাত ও দশটি প্রহরণ অপরিমেয় বলবীর্যের। লক্ষ্মী ধনের, সরস্বতী জ্ঞানের, গণেশ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের প্রতীক। সিংহ বশংবদ ভক্তের এবং অসুর সমস্ত অশুভ ও দুর্গতির প্রতীক। দেব সেনাপতি কার্তিক তারকাসুরকে বধ করে স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাদের পুনরায় স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। অতন্দ্র প্রহরায় রক্ষা করেছিলেন স্বর্গের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।
দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে ভক্ত পুণ্যার্থীরা আজ রোববার পূজামন্ডপে সমবেত হবেন আনন্দ ও শ্রদ্ধাকূল চিত্তে। পূজা শেষে সকলে মিলে জগজ্জননী দুর্গার চরণে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অশান্তি থেকে মুক্তি কামনায় সমাগত পুণ্যার্থীদের কন্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হবে শান্তির মন্ত্র। নানা বয়স ও শ্রেণি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ পরিণত হবে মহাতীর্থে।
গতকাল শনিবার মহাসপ্তমী বিহিত পূজা থেকেই মূলতঃ সাড়ম্বরে শুরু হয় পূজা। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার শ্রীচরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবেন ভক্তরা। সেই সাথে চলবে বিশ্বের সকল মানুষের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অশান্তি থেকে মুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা। একই সাথে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করা হবে প্রতিদিন মন্দিরে মন্দিরে।
গতকাল শনিবার বিকেল থেকে পুণ্যার্থীরা মাতৃ দর্শনে দলে দলে এ মন্দির থেকে ও মন্দিরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, ঝুমকা সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, মাছুদিঘিরপারের ত্রিণয়নী, মণিপুরী রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, নাইওরপুল রামকৃষ্ণ মিশন ও বলরাম জিউড় আখড়া, কাজলশাহ, মিরের ময়দান, জামতলা, তোপখানা, মাছিমপুর, মণিপুরী পাড়া, মাছিমপুর কুরি পাড়া, চালিবন্দর, যতরপুর, মিরাবাজার, রায়নগর, সোনাতুলা, গোপালটিলা, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, আম্বরখানা, করেরপাড়া, পনিটুলা, আখালিয়া কালীবাড়ি, শেখঘাট, গোটাটিকর, জৈনপুর ও শিববাড়ি এলাকায় ভক্তদের ঢল নামে।