নিরাপদ সড়ক দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ৫:১৭:০৩ অপরাহ্ন
প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার পার্থক্য হলো দুঃখ। তাই নিজের প্রত্যাশাটা একটু কমিয়ে ফেলুন, দেখবেন আপনার দুঃখও কমে গেছে। -রেদোয়ান মাসুদ
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করবার লক্ষে এই দিবসটি পালন শুরু হয় ২০০৩ সালে। এই দিবসটির ইতিহাস আরও পুরনো। ১৯৯৩ সালের আজকের এই দিনে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। সেই থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে দেশব্যাপি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৩ সালে আজকের এই দিনকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু এই ঘোষণা শুধু ঘোষণায়ই থেকে যায়। বাস্তবে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে ব্যাপক প্রাণহানিসহ সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে বিশ্বের অনেক দেশই অনুসরণ করছে, কিন্তু আমাদের দেশে এর সফলতা আসছে না।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। এর পরিসংখ্যান দীর্ঘ। সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে কমপক্ষে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সারাদেশে। সারাবিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এশিয়ায় সপ্তম স্থানে। এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে সম্পদের ক্ষতি ৪০ হাজার কোটি টাকা। স্মরণ করা যেতে পারে, ইউনাইটেড নেশন্স ডিকেড অব অ্যাকশন এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এর অনুসমর্থনকারি হিসেবে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। অথচ সেই লক্ষ অর্জন হয়নি। বরং বর্তমানে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত পোষণ করছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই এদেশে তৃতীয় মৃত্যুর কারণ হবে সড়ক দুর্ঘটনা। তাদের মতে- জনসচেতনতার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত চালক ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত হলেই নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। গবেষণার তথ্য হচ্ছে-অদক্ষ চালক, সড়কের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, রাস্তার জ্যামিতিক ত্রুটি, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালানো, পথচারি ও যাত্রিদের অসাবধানতা ইত্যাদি ১৭টি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবচেয়ে জরুরি, সর্বমহলের সচেতনতা। ট্রাফিক আইন সম্বন্ধে জনগণকে সচেতন হতে হবে। গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। চালককে একটানা পাঁচ ছয় ঘন্টার বেশি গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ফিটনেসবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালানো। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ওভারটেক করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন হালকা যান চলাচলের পৃথক লেন থাকার ব্যাপারটিও গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ‘ইচ্ছেকৃত’ দুর্ঘটনা ঘটানোর জন্য দায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।