সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দলীয় এমপিদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৫৯:০৯ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক ঃ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সংসদ সদস্যদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও চ্যালেঞ্জিং হবে। নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে উল্লেখ করে এ সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক এক ঘণ্টার বেশি সময় চলে। বৈঠকে দলীয় এমপিদের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় দলীয় এমপিরা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তারা বলেন, বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে এই ষড়যন্ত্র চলছে বিষয়টি এমন না। তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি ছারখার করে দিয়েছে।
এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সুতরাং সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।’
যোগ্যতা দিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই সংসদে যারা আছেন তাদের অনেকে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাতে কেউ দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা বা বিদ্রোহী কর্মকা- করবেন না। যারা করবে তাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে।
কাউকে চেয়ার দেওয়া হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সকলকে নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসলে অতীতের মতো তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে। যদি না আসে, তবে আরো অনেক দল নির্বাচন আসবে। ফলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
বিএনপি’র আন্দোলন ও ২৮ অক্টোবরের বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা আন্দোলন করে করুক, আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবে রাজপথ আমরা ছেড়ে দেব না। বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের এমপি একেএম শামীম ওসমান জোরালো বক্তব্য দেন। এমপিদের অনেকেই তার বক্তব্যে সমর্থন জানান। তিনি বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ওরা থেমে নেই। সারাদেশে আঞ্চলিক মিডিয়াগুলোকে জামায়াত অর্থায়ন করছে। সরকার, আওয়ামী লীগের এমপি, নেতা, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই লিখছে। প্রয়োজনে আমাকে মনোনয়ন দিয়েন না। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যিনি জিতে আসতে পারবেন তাকে মনোনয়ন দিতে হবে।’
সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘হাজার বছরে বঙ্গবন্ধু এসেছেন একজন। ভবিষ্যতে আরেক জন বঙ্গবন্ধু আসবেন কিনা সন্দেহ আছে। কিন্তু এখনো প্রতি জেলায় জেলায় খন্দকার মোস্তাকরা আছে। এরা আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের জন্য কাজ করছে। মোস্তাকদের চিহ্নিত করতে হবে, এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।’
রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী নিজ জেলা দলীয় কোন্দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন। লালমনিরহাটের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন অভিযোগ করেন, এলাকায় দলের ঐক্য থাকলেও অনেক সময় ঢাকা থেকে অনেকে সমস্যা তৈরি করা হয়। ঢাকায় বসে গ্রুপিং সৃষ্টি করে দেয় এলাকায়। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক মনোনয়নের ফেরিওলা বেরিয়েছে। এরা সারা বছর মাঠে থাকে না, নির্বাচন আসলে তৎপরতা বাড়ে। তারা এমপিদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়, এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। এদের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে সব তথ্য আছে। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে সকল বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে। দলের ভেতরে-বাইরে সকল ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’