শারদীয় দুর্গোৎসব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ৬:১১:০৮ অপরাহ্ন
একজন বাবা বলে না যে সে তোমাকে ভালোবাসে বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে তিনি তোমাকে ভালোবাসে। -দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট
চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যবাহি ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বিদের বৃহত্তম এই উৎসবের আজ চতুর্থ দিন। পাঁচদিনব্যাপি উৎসবের সমাপ্তি হচ্ছে আগামিকাল বিজয়া দশমি উদযাপনের মধ্য দিয়ে। শারদীয় দুর্গোৎসব মানে দুর্গাপূজা হচ্ছে বিশেষ করে বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। প্রতি বছর জাঁকজমকের সাথেই এই উৎসব উদযাপিত হয়। গত ক’দিন ধরেই চলছে এই উৎসব। তবে এর প্রস্তুতি বলা যায় মাস খানেক ধরেই চলছে। শহরের পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ সর্বত্র উৎসবের আমেজ।
দুর্গাপূজার মূলমন্ত্র হচ্ছে অসুর বিনাশ করে সত্য ও সুন্দরের বিজয় সুনিশ্চিত করা। মূলত এই ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজামন্ডপ-প্রতিমা সাজানো হয় জমকালো সাজে। রঙিন ঝলমলে বাতির আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে মিলন ঘটে শুধু হিন্দু নয়, সকল ধর্মের মানুষের। সব মিলিয়ে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত উৎসব হচ্ছে দুর্গোৎসব। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের সহাবস্থান আছে বলেই প্রত্যেকে নিজ নিজ উৎসব উদযাপন করতে পারছে নির্বিঘেœ। দেখা গেছে পূজামন্ডপগুলোতে চলছে সাড়ম্বরে গান বাজনাসহ অন্যান্য উৎসব। ঢাকঢোলের
আওয়াজে মুখরিত চারপাশ। কিন্তু মসজিদে আজান কিংবা নামাজের সময় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গান বাজনা ঢাকঢোলের শব্দ। এতেই প্রমাণিত হয় এদেশে হিন্দু-মুসলিম কেউ কারও বৈরি নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই বাঙালি জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি কেউ কখনও। তাছাড়া, পেশাজীবী ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বরাবরই এই ধরনের অনুষ্ঠান সফল করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আসুরিক শক্তি বরাবরই পরাজিত হচ্ছে বাঙালি মুসলিম-হিন্দুসহ সকল ধর্মাবলম্বির পারস্পরিক সহাবস্থানের কাছে। বাঙ্গালি হিন্দুদের এই দুর্গোৎসবের তাৎপর্য সম্বন্ধে ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, শরৎকালে অকাল বোধনে দেবি জাগরিত হয়েছিলেন। মহিষাসুর বধ করে দুর্গত প্রাণকে তিনি মুক্ত করেছিলেন। স্বর্গে-মর্ত্যে যখন অসুরদের দাপট, তখনই দুর্গতিনাশিনী দুর্গার রণহুংকার। নিপীড়িত প্রাণের আর্তি উপেক্ষিত থাকতে পারেনা। মানবতা লাঞ্চিত হলে বিপত্তারিনীকে জাগতেই হবে। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শাস্ত্র বলেছে, দুর্গার অকাল বোধন এবং শরৎকালে জাগরণের ঘটনা আমাদেরকে জরুরি কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করে; অর্থাৎ জরুরি কাজে সময় ক্ষেপন না করার প্রেরণা দেয়। উৎসাহিত করে দানবিকতামুক্ত মানবিক সমাজ গঠনের। এই ঘটনা অত্যাচার নিপীড়ন ও অশুভ শক্তিমুক্ত মর্ত্যলোক গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে। সারা বছরই দেবিদুর্গার আগমন মাতৃভক্ত মানুষের মনে এই প্রত্যয়টাকেই ব্যক্ত করে। সেটা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই হতে পারে প্রযোজ্য।
দেবি প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আগামিকাল সমাপ্ত হচ্ছে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রতিমা বিসর্জন মানে দীর্ঘ আনন্দ উৎসবের মধ্যে বিষাদের কালো ছায়া। তবে এই বিসর্জনে শুধু কষ্ট নয়, আনন্দও আছে, আছে প্রাপ্তিও। প্রতিমা বিসর্জনের অশ্রুতে যদি মানুষের মনের কালিমা ধুয়ে যায়, তবে এর চেয়ে আর বড় প্রাপ্তি কী থাকতে পারে? আর শুধু সনাতন ধর্মেই নয়, সকল ধর্মেই মানুষকে সব সময় মনের কালিমা দূর করে সুন্দর-পবিত্র মন গড়ে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শুভ ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হোক, নশ্বর পৃথিবীতে নশ্বর মানুষের যাপিত জীবন সর্বপ্রকার ক্লেশ ও ক্লেদমুক্ত হোক, দূরীভূত হোক দুর্যোগ দুর্ভোগ সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে। পাপ, তাপ, দুঃখ, জরা বিসর্জিত হোক চিরতরে। প্রতিক্ষার আরেকটি বছর। অন্তত এই একটা বছর পাপমুক্ত হয়ে মানবজাতি সুন্দর আগামির পরিকল্পনা করুক, রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ত্বরান্বিত হোক। এই প্রত্যাশা আমাদের। শুভ বিজয়া উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সকলের জন্য রইলো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।