শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী ও যজ্ঞ আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ৫:২৭:২৬ অপরাহ্ন
সুনীল সিংহ ঃ
সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ সোমবার। এদিন যজ্ঞাদিও অনুষ্ঠিত হবে। যজ্ঞ, নবমী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গতি নাশিনী মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধনা। আর একটি দিবানিশি পেরুলেই মা দুর্গা ফিরবেন কৈলাশে স্বামীগৃহে।
শরতের শুক্লপক্ষে ভক্তের অকাল বোধনে মা দুর্গা- লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, কলা বৌ এবং সবার উপরে শিবকে নিয়ে সপরিবারে এসেছেন ম-পে। সাথে আছে অসুর, দুর্গার বাহন সিংহ, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা, সরস্বতীর বাহন শ্বেতহংস, কার্তিকের বাহন ময়ূর ও গণেশের বাহন ইঁদুর।
বিশ্বের সকল শক্তির মিলিত রূপ শ্রী শ্রী দুর্গা। শিব, দুর্গা বা কালী সব একই শক্তি। ঈশ্বরের মাতৃরূপ শ্রীদুর্গার মধ্যে বিদ্যমান। এই মহাশক্তির আরাধনায় দেবীকে বিভিন্ন রূপে বন্দনা করা হয়। শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থে দেবীর নয়টি রূপের কথা উল্লেখ আছে। যা নবদুর্গা নামে আখ্যায়িত। রূপগুলো হলো শৈলীপুত্র, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মান্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী। এই নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন স্বয়ং ব্রহ্মা।
গতকাল রোববার ছিল মহাষ্টমী বিহিত পূজা ও কুমারী পূজা। কুমারী দেবী ভগবতীর অতি সাত্ত্বিক রূপ। জগৎমাতা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্ত্রী হয়েও চির কুমারী। কুমারী আদ্যাশক্তি, মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মূলতঃ নারীর যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। মাটির প্রতিমায় দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তবরূপ কুমারী পূজা। কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি, পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সুক্ষèরূপে বিরাজিত।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রতিটি বাড়িতে মুড়ি, নাড়ু ও মুড়কি বানানোর প্রতিযোগিতা চলে। গতকালও মন্দিরে মন্দিরে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সন্ধ্যার পর এ ভিড় আরো বাড়ে।
নগরীর দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, মণিপুরী রাজবাড়ি, ঝুমকা সংঘ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী বাড়ি, সনাতন যুব ফোরাম, লামাবাজারের তিন মন্দির, মির্জাজাঙ্গালের দত্ত কুটির, মাছুদিঘিরপাড়ের ত্রিণয়নী, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, চালিবন্দর, কাস্টঘর, যতরপুর, মাছিমপুর মণিপুরীপাড়া, মাছিমপুর কুরিপাড়া, তোপখানা, শেখঘাট, কাজলশাহ, রায়নগর, ঝেরঝেরিপাড়া, শিবগঞ্জ, গোপালটিলা, বালুচর, দুর্গাবাড়ি, আম্বরখানা, করেরপাড়া, আখালিয়া কালিবাড়ি, গোটাটিকর, জৈনপুর ও শিববাড়ি পূজামন্ডপ এলাকায় অনেকটা ছিল ভিড়।
এদিকে, সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়াল ও তার সহধর্মিণী নীতা জয়সওয়াল। তিনি সন্ধ্যায় নগরীর মাছিমপুর মণিপুরী পাড়ার শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া, শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর মন্দির, কুরিপাড়া পূজামন্ডপ, দাড়িয়াপাড়ার সনাতন যুব ফোরাম ও চৈতালী সংঘ, নাইওরপুলের রামকৃষ্ণ মিশন, শ্রীশ্রী বলরাম জিউর আখড়া, পরে আরো কয়েকটি পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন।
এদিকে, মাছিমপুর মণিপুরী পাড়ার শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া দুর্গাপূজা কমিটির উদ্যোগে দিনব্যাপী বিশেষ হেলথ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় যৌথভাবে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন সিলেট নার্সিং কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ইলা সিনহা, মাছিমপুরে রবীন্দ্রনাথ উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি-মনিসেনা সিংহ, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া কমিটির সভাপতি অলক সিংহ, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সুকুমার সিংহ, ভারতের বিশিষ্ট সমাজকর্মী প্রণব কুমার সিংহ, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন্দ্র সিংহ বাপ্পা, শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউ আখড়া দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি বিপ্লব সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক সুমন সিংহ।
সাংবাদিক সুনীল সিংহের সঞ্চালনায় ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবায় ছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিউমটালজি বিশেষজ্ঞ ডা. সুদেষ্ণা সিনহা, মেডিকেল অফিসার ডা. সিধু সিংহ, পপুলার মেডিকেল সেন্টার এন্ড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শ্রাবন্তী শর্মা। সহযোগিতায় ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্টাফ নার্স ইমন সিংহ, পটুয়াখালী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নার্সিং ইন্সটিটিউটের ছাত্রী মেহেক সিনহা।
হেলথ ক্যাম্পের দিনব্যাপী কার্যক্রমে উচ্চ রক্তচাপ স্ক্রিনিং, ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, স্বাস্থ্য বার্তা বিতরণ ও বিএমআই নির্ণয় করা হয়।