দুর্গা পূজা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ৮:৫৮:২৪ অপরাহ্ন
রঞ্জিত কুমার দে
হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ এবং সার্বজনীন উৎসব দুর্গা পূজা। একে শারদীয় পূজাও বলা হয়ে থাকে। নতুন বসন ভূষণে সজ্জিত হয়ে হিন্দুরা মহা ধূমধামের সঙ্গে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। মহামায়া, দুর্গা দশভুজ এবং শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন এক এক দেবতা এক এক অভীষ্ট সিদ্ধ করেন।
পুরাকালে এক রাক্ষসের হাতে স্বর্গের দেবতারা নিষ্পেষিত হতে থাকেন। অমর বর প্রাপ্ত এ রাক্ষসকে সকল দেবতা সম্মিলিতভাবে বধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অত:পর তারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শরণাপন্ন হন। এদের দেহ থেকে নির্গত শক্তিপুঞ্জ এক জ্যোতির্ময়ী নারী বিশেষ মূর্তি ধারণ করে। এ নারী মূর্তিই দেবী দুর্গা।
সত্যযুগে সুরথ নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি রাজ্য হতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বনে চলে যান। সেখানে স্ত্রী-পুত্র কর্তৃক বিতাড়িত সমাধি বৈশ্য নামে এক ব্যক্তির আগমন ঘটে। উভয়েই মহাসংকটে পড়লেন। এ সংকট থেকে মুক্তি লাভের আশায় এক সত্যাদর্শী মুনীর পরামর্শে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য বসন্তকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। তাই দুর্গা পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। আবার লংকার রাজা রাবণ বধের জন্য অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গা দেবীর অর্চনা করেন, এ জন্যে এটি শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। শারদীয় দুর্গোৎসবকে অকাল বোধনও বলা হয়ে থাকে। আষাঢ় মাসের শুক্লা একাদশী তিথিকে বলে উম্মান একাদশী। এদিন দেবতাদের জাগরণ। শয়ন একাদশী থেকে উম্মান একাদশী সময়টা এক প্রকার অকাল। এ সময় নিদ্রিত দেব দেবীর পূজা করতে হলে দরকার হয় বোধনের। নিদ্রিত দেব দেবীকে বোধনের মাধ্যমে জাগ্রত করে রামচন্দ্র পূজা করেছিলেন বলে শরৎকালের দুর্গা পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়ে থাকে। কালক্রমে মহারাজ রামচন্দ্রের এ শরৎকালীন পূজাই দুর্গা পূজা হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে।
মাটি, খড়, বাঁশ, বস্ত্র ইত্যাদির সাহায্যে দুর্গা দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয়। পুরাণে বলা হয়েছে যে দুর্গা কৈলাশ পর্বতের শিখরে স্বামীগৃহ শিবের প্রাসাদে বাস করেন। বৎসরান্তে স্বামীগৃহ থেকে মর্ত্যে পিতৃগৃহে পুত্র কন্যাসহ আগমন করেন। এ উপলক্ষে হিন্দুরা তার কল্পিত মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন। দুর্গাকে দশটি হাতের অধিকারিণী অর্থাৎ দশভুজা বলে কল্পনা করা হয়। আর এ কল্পিত দেবীর দশ হাতে দশটি অস্ত্র থাকে। দুর্গা পূজার দুটি সময় বসন্তকাল ও শরৎকাল। এর মধ্যে বসন্তকালের পূজাই প্রশস্ত। একে বাসন্তী পূজা বলে। কথিত আছে যে, লংকার রাজা রাবণকে বধ করার জন্য রামচন্দ্র শরৎকালে অর্থাৎ অকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। এ জন্য একে অকাল বোধন বলা হয়। তখন থেকেই শরৎকালীন দুর্গা পূজার প্রচলন শুরু হয়। একে শারদীয় উৎসবও বলা হয়ে থাকে। দশভুজা বিশিষ্ট দেবীর মূর্তি পূজা হয়ে থাকে। তার ডানে থাকেন লক্ষ্মী এবং বামে সরস্বতী। সঙ্গে সিদ্ধিদাতা গণেশ এবং দেব সেনাপতি কার্তিক। দেবী সিংহবাহিনী। দেবীর এক পা সিংহের উপর অপর পা অসুরের উপর। দেবী দশ হস্তের অস্ত্র দ্বারা অসুরকে আঘাত করতে উদ্যত। শরৎকালের শুক্লা তিথিতে দেবীর বোধন হয় এবং সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিন মহাসমারোহে পূজা হয়। দশমীর দিনে দেবীর বিসর্জন হয়। ঐদিন নিকটস্থ জলাশয়ে দেবীর প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। এদিনকে বলা হয় বিজয়া দশমী। এদিন হিন্দুরা সম্বন্ধ অনুসারে পরস্পরকে প্রণাম, আশীর্বাদ, আলিঙ্গন করে থাকে। এ অনুষ্ঠানটি পরস্পরের মনোমালিন্য দূর করে প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপন করে।
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব। তারা কর্মক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত প্রাণকে এই উৎসবে সতেজ এবং উৎফুল্ল করে তোলে। অতীতের বিবাদ-বিস্বাদ দূর করে সাদর সম্ভাষণের মধ্য দিয়ে পরস্পরের মধ্যে প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক