তাণ্ডব চালিয়ে কক্সবাজার অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১:০৫:২৫ অপরাহ্ন
৩ জনের মৃত্যু: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ডাক ডেস্ক ঃ ব্যাপক তা-ব চালিয়ে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করেছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুন। উপকূল অতিক্রমকালে আঘাতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে গাছপালা এবং কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় হামুনের তা-বে কক্সবাজার পৌরসভাসহ দুই উপজেলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর ওসমান সরওয়ার টিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাউন্সিলর ওসমান জানান, কক্সবাজার শহরে দেয়াল ধসে একজন ও মহেশখালী এবং চকরিয়ায় গাছচাপায় ২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ৭ নং ওয়ার্ডে দেয়াল ধসে আবদুল খালেক (৩৮) নিহত হন। অপরদিকে মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল গ্রামে গাছচাপায় হারাধন নামের একজনের মৃত্যু হয়। চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে আসকর আলী নামের আরেকজন মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টা হতে ঘূর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে। এরপর একটানা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূল ও এর আশপাশের অঞ্চল দিয়ে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। একই সাথে চলে বজ্রসহ বৃষ্টিও। ঝড়ো হাওয়া আর বাতাসের তীব্র আঘাতে কক্সবাজার শহর ও উপকূল এলাকায় গাছপালা উপড়ে এবং কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাঝরাতেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরসহ অনেক এলাকায় ঝড়ের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যহত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজার শহরে ও আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা হতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১২টা) কক্সবাজার জেলা শহরসহ পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সর্বত্র।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ বুধবার দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুন গতকাল সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় হামুন সাগরে গতিপথ পরিবর্তন করে এটি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। পরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নাম্বারের পরিবর্তে ৭ নাম্বার বিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্র বৃষ্টি হয়।
তিনি আরও জানান, রাত দশটার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় হামুন কক্সবাজার উপকুল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে যায়। তবে, এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে । উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে থেকেই অনেক নৌ-যান উপকূলে নোঙর করা রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রাথমিকভাবে জেলার নয় উপজেলায় গুরুত্ব বিবেচনায় কমবেশি করে ১৪ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি উপজেলায় ৫০ হাজার করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সাড়ে চার লাখ নগদ টাকা। বুধবার ক্ষয়ক্ষতির উপর ভিত্তি করে বরাদ্দের আবেদন করা হবে।