পানিসংকটে কোটি মানুষ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৩২:৫৫ অপরাহ্ন
নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হলে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে। -ফ্রান্সিস টম্পসন
পানিসংকটে দুইশ কোটি মানুষ। জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকট থাকা দেশগুলোতে বসবাস করছে। তাই চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু বিপর্যয় যতো প্রবল হবে বৈশ্বিক সুপেয় পানির সংকট আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে। এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিই হবে ভবিষ্যৎ মানবজাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। নিরাপদ সুপেয় পানি প্রাপ্তি হবে আগামি বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ। আর বিজ্ঞানিগণ তো অনেক আগেই বলেছেন, দেশে দেশে পানির স্বল্পতা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ বিশ্বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে।
পৃথিবীর জলভাগের ৯৭ দশমিক তিন শতাংশ হচ্ছে লোনাপানি আর বাকি মাত্র দুই দশমিক সাত শতাংশ হচ্ছে স্বাদুপানি। বিশ্বে স্বাদুপানির প্রায় ৬৯ শতাংশ রয়েছে ভূগর্ভে আর ৩০ শতাংশ মেরু অঞ্চলে বরফের স্তূপ হিসাবে জমা আছে। আর মাত্র এক শতাংশ আছে নদী ও অন্যান্য উৎসে। অর্থাৎ আমরা পৃথিবীর মাত্র ০.০০০৭ শতাংশ পানি ব্যবহার করতে পারি এবং যেটি কিনা ৬.৮ মিলিয়ন মানুষের খাবার পানির উৎস। প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপি বেড়ে চলেছে সুপেয় পানির চাহিদা। কিন্তু চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। পানি সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বন্যা এবং খরা বিশুদ্ধ পানির উৎসকে ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তাছাড়া, ক্রমবর্ধমান পানির সংকট বিশ্বব্যাপি চরম অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে রয়েছে পানি সম্পদের বিপর্যয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষি খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের অভাবে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ইউনিসেফ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ি নিরাপদ পানির সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুই-তৃতীয়াংশের বাস ১০টি দেশে। যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এ দেশে সুপেয় পানির সংকটে আছে দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষ। তাছাড়া, ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। দেশে কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির ৭৮ শতাংশই ভূগর্ভস্থ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামি ২০৫০ সালে চরম পানি সংকটে পড়বেন বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নিরাপদ পানি প্রাপ্তিকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করেছে। এই সংকট নিরসনে কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে প্রতিটি দেশের সরকার ও জনগণকে।