ঢাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমাবেশকে ঘিরে বাড়ছে উত্তেজনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ৭:৪১:২২ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টা-পাল্টি সমাবেশকে সামনে রেখে ক্রমশ উত্তেজনা বাড়ছে। সংঘাতের আঙ্ককায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ লোকজন।
জানা গেছে, সমাবেশ করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নয়া পল্টন ছাড়া অন্য দুটি ভেন্যু প্রস্তাব করার আহ্বান জানালেও বিএনপির পক্ষ থেকে ‘নয়া পল্টনই’ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে আরও কয়েকটি জোটকে ডিএমপির দেওয়া চিঠির জবাবে তারাও তাদের নির্ধারিত স্থানের কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলও জানিয়েছে শনিবার দলীয় শান্তি সমাবেশ হবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও সেদিন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ দলটি শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিলেও তাদের অনুমতি দেয়া হবে না বলে পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, সরকার এখনও তাদের কাউকে সমাবেশের অনুমতি না দিলেও এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কয়েক হাজার বিএনপি নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ের সংগঠকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ঢাকার প্রবেশপথে র্যাব তল্লাশি চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে দলীয় লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একই দিনে সমাবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আমি মনে করি না।’
এদিকে, মহাসমাবেশের স্থান নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হবে এমন দিক মাথায় রেখেই নয়াপল্টন ঘিরেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিএনপি।
তবে মহাসমাবেশ ঘিরে নিজে থেকে সংঘাতে না জড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বরং সরকারের দিক থেকে আক্রমণ করা হলে তাতে উল্টো সুবিধা হবে বলে মনে করছে দলটি।
বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপি গত এক বছর ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করে আসছে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হলে সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ হবে।
তারা বলছেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষটাও হবে অহিংস শান্তিপূর্ণ। এক্ষেত্রে দলটির কৌশল হচ্ছে নিজে থেকে সংঘর্ষে না জড়ানো। বিএনপি বুঝেছে যে, সরকারের হয়ে এক কাট্টা পুলিশ প্রশাসনের মুখোমুখি হয়ে তারা টিকতে পারবে না।
এদিকে, ‘সুনির্দিষ্ট জায়গা চাওয়ার পরও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি না মিলে, রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে। একইসঙ্গে কোথা থেকে বিক্ষোভ শুরু হবে, কোথায় শেষ হবে তার কোনও ঠিক নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নুর।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমাদের এটাই আলাপ হয়েছে সামনে যদি কামানও আসে, তা মোকাবিলা করেই সামনে এগোতে হবে। রাজপথ থেকেই জয়লাভ করতে হবে।’
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য আওয়ামী লীগকে বিকল্প কোনো স্থানে সমাবেশ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। এছাড়া বিএনপিকেও সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থানের জন্য এখনও অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। কিন্তু দুই দলই তাদের নিজ নিজ পছন্দের স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই।”
বিএনপির মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান জানান, আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলীয় সূত্র বলছে, সমাবেশের জায়গা নিয়ে বিএনপির কী চিন্তা, সেটি আজ শুক্রবার মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে উঠে আসবে। সমাবেশের অনুমতি পেলে বা না পেলে পরবর্তী কী করণীয় সে সম্পর্কেও তিনি বার্তা দেবেন। স্থান পরিবর্তন নিয়েও তিনি কথা বলবেন।
সূত্রের দাবি, সমাবেশের জায়গা নিয়ে প্রশাসন থেকে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দেওয়া হলে বিএনপি তা গ্রহণ করবে। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে যেভাবে আন্দোলন হয়ে এসেছে, সে বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখেই মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন করার পক্ষে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তবে শেষ মুহূর্তে সমাবেশ করতে না দিলে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে যেতে বাধ্য হবে বলে দাবি করেছে সূত্র। এক্ষেত্রে গ্রেফতার হতে পারেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত তিন দিনে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ১২০০ নেতাকর্মীকে। বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ১৬টি।
২৮ অক্টোবর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের সতর্কবার্তা
২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে সতর্কবার্তা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য দূতাবাস।
নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্র জানায়, “আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের কাছে এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কাছে ভিআইপি রোডে। মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা গ্রহণ এবং মনে রাখা উচিত যে, শান্তিপূর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে বিক্ষোভগুলোতে সংঘর্ষ হতে পারে। আপনাকে বিক্ষোভ এড়াতে এবং কোনো বড় সমাবেশের আশপাশে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া বার্তায় আগামী ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাবেশের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয় এবং এক্ষেত্রে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়।