বিপিজেএ’র ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচনকালে পরিকল্পনামন্ত্রী
শেখ হাসিনা জাতির দৃষ্টিকে গ্রামের দিকে নিয়ে গেছেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ৪:৫৪:০২ অপরাহ্ন
একটি ছবি পুরো বিষয়ের বক্তব্য বর্ণনা করে ঃ দানবীর ড. রাগীব আলী
স্টাফ রিপোর্টার : পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেছেন, সম্পূর্ণ সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং তার পরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। আবহমান কাল থেকে সবই শহরকেন্দ্রিক ছিল। শহুরে বিত্তবান, উচ্চ পেশাজীবীরাই সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। শেখ হাসিনা জাতির দৃষ্টিকে গ্রামের দিকে নিয়ে গেছেন। গ্রাম উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনায় শহরের সুযোগ সুবিধা গ্রামে নিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটি ২০২৩-২৪ এর অভিষেক উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘লেন্স’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল বাতিন ফয়সল।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দানবীর ড. রাগীব আলী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিনিয়র সাংবাদিক আল আজাদ।
ফটো সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ফটো সাংবাদিকতা আরো ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোন পরিস্থিতিতে ফটো সাংবাদিকদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হত্যা তান্ডবের মধ্যেও ফটো সাংবাদিকরা কাজ করছেন। তিনি বলেন, ছবি মনে দাগকাটে, ছবি কথা বলে। একটি ছবি হাজারো শব্দ থেকেও শক্তিশালী। দুটি ছবি তার মন থেকে কখনো যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার নাপাম বোমায় ঝলসে যাওয়া একজন নারী এবং অন্যটি বঙ্গবন্ধু একজন সৈনিককে হাতে ধরে বন্ধুর মত টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, সৈনিকটির মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি।
‘তিনি পানি থেকে ডাঙ্গায় উঠেছেন অর্থাৎ সিলেট এসেছেন, একটু পরে ঢাকা যাবেন’ বলে হাস্যরস করে বলেন, হাওরে কিছুদিন পরে আপনারা উড়াল সড়ক দিয়ে যাবেন। সড়ক পথের দুর্ভোগ থাকবে না। দিরাই শাল্লায় ও আজমিরিগঞ্জে ব্যাপক কাজ হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের উন্নয়ন এবং সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, সিলেট ছেড়ে কখনো যাবো না। সিলেট আমাদের আঞ্চলিক রাজধানী। সুনামগঞ্জের উন্নয়ন মানে সিলেটের উন্নয়ন। সিলেটের উন্নয়ন মানে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন। পুরো জাতির উন্নয়ন। তিনি বলেন, আমরা বৃহত্তর সিলেটীরা চিন্তা, চেতনায়, ইতিহাসে, ঐতিহ্যে এক ও অভিন্ন। আমরা আমাদের উন্নয়নে একত্রে কাজ করে যাবো।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের প্রশ্নে আপোষহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর মতো সাহসী, কর্মবীর, দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া যাবে না। আমরা সবাই মিলে উন্নয়নের এই ধারাকে কাঙ্খিত পর্যায়ে নিয়ে যাবো।
তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, নতুন মেয়রের মাধ্যমে সিলেটের আধুনিকায়ন ও স্মার্ট সিলেট গড়ে উঠবে। সবাইকে নিয়ে তিনি সুন্দর ও আধুনিকায়ন নগরী গড়ে তুলবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিক্ষানুরাগী, দানশীল, সমাজসেবীসহ বহুগুণে গুণান্বিত একজন ব্যক্তি সবার শ্রদ্ধেয় দানবীর ড. রাগীব আলী উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তিনি একজন দানশীল মহান ব্যক্তি। স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অকাতরে দান করেছেন। তিনি একটি চমৎকার বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন সেখানে পড়ালেখার মান অনেক ভালো। রাগীব আলীর জন্য আমরা সবাই দোয়া করি।
মন্ত্রী এমএ মান্নান ফটো সাংবাদিকদের খেটে খাওয়া, সাধারণ মানুষের ছবি তুলে আনার আহবান জানিয়ে বলেন, কৃষকের পরিশ্রম, শ্রমিকের হার না মানা ঘর্মাক্ত শরীর খাটুনি, নারীর জীবন সংগ্রাম- এসব তুলে আনতে হবে ছবির মাধ্যমে।
পরে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। আমাদের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী চলবো। অনুরোধ অনুনয় বিনয় করে বাইরের লোকদের আনা শেষে খাল কেটে কুমির আনার মতো অবস্থা হবে। ২৮ অক্টোবর সম্পর্কে তিনি চিন্তিত নয় উল্লেখ করে বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সবাই করতে পারেন বিএনপিও করছে। অশান্তি সৃষ্টি করলে বিএনপি বা আওয়ামীলীগ হলেও পুলিশ তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী-সমাজসেবক দানবীর ড. রাগীব আলী ফটো সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে তিনি আনন্দিত উল্লেখ করে বলেন, সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও ফটো সাংবাদিকরা কাজ করেন। তাদের একটি ছবি পুরো বিষয়ের বক্তব্য বর্ণনা করে। তিনি মন্ত্রী এমএ মান্নানকে পেয়ে আরো বেশি খুশি জানিয়ে বলেন, সুনামগঞ্জের যোগাযোগ ভালো হয়েছে। সুনামগঞ্জে অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন তাকে আরো বেশি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ২৪ বছর থেকে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর স্থায়ী অফিস নেই উল্লেখ করে দানবীর ড. রাগীব আলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি একটি ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এসময় মুহুর্মুহু করতালিতে তাকে অভিনন্দন জানান সকলে।
বিশেষ অতিথি আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ফটো সাংবাদিকদের সাথে তার আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। আগামীতেও এই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন তিনি।
নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সবাইকে নিয়েই প্রাণের শহর সিলেট গড়ে তুলবো। ফটো সাংবাদিকরাসহ সবাই সহযোগিতা করবেন। আগেও ফটো সাংবাদিকদের সহযোগিতা পেয়েছি। ভবিষ্যতে পাব বলে আশা করি।
সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, তাদের ছাত্র রাজনীতির সময়ে তৎকালে ফটো সাংবাদিক বলতে আতা ভাইকে বুঝতেন সবাই। তিনি শান্ত চলা ফেরা করতেন। এরই মধ্যে ছবি নিয়ে নিতেন। ছবি তোলার মধ্যেও কারিগরি আছে। তিনি ফটো সাংবাদিক সিলেট বিভাগীয় কমিটির ঐক্যের প্রশংসা করেন এবং পেশাগত কাজে দায়িত্বশীলতার উপর গুরুত্বআরোপ করে আগামী নির্বাচনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানান।
শামীমা শাহরিয়ার এমপি বলেন, ক্যামেরার কারিগর ফটো সাংবাদিকরা। তারা নিখুঁতভাবে কাঙ্খিত ছবিটি তুলে আনেন। ক্যামেরার সৃষ্টিশীলতা ধ্বংস হয়না। একটি হৃদগ্রাহী ছবি আজীবন মানুষের হৃদয়ে থেকে যায়। নতুন প্রজন্ম যেন আপনাদের দেখে শিখতে পারে। নির্বাচন আসলে সত্যটা তুলে ধরবেন আপনাদের ক্যামেরায়।
সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমদের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও তথ্য সম্পাদক পলক ভট্টাচার্যের পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করার মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুব্রত দাশ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল ও এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আতাউর রহমান আতা, সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ হান্নান, সাবেক সহ- সভাপতি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সিলেট জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) স¤্রাট তালুকদার, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য মাওলানা মো: মুছাদ্দিক আহমদ, বাসস সিলেটের সাবেক প্রতিনিধি গল্পকার সেলিম আউয়াল, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ, ডাঃ মঈনউদ্দিন জগিং ক্লাবের সদস্য আবুল কালাম, বিপিজেএ-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী, সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ হোসেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক রেজা রুবেল, নির্বাহী সদস্য আশকার আমিন লস্কর রাব্বী ও মো. নুরুল ইসলাম এবং সদস্য দুলাল হোসেন, আফতাব উদ্দিন, মামুন হাসান, আনিস রহমান, নাজমুল কবীর পাভেল, বিলকিস আক্তার সুমি, জাবেদ আহমদ, ইকবাল মুন্সি, এসএম রফিকুল ইসলাম সুজন, শেখ আব্দুল মজিদ, শিপন আহমদ, এইচ এম শহিদুল ইসলাম, আবু বক্কর, মামুন হোসেন, আজমল আলী, আব্দুল খালিক, একরাম হোসেন প্রমুখ।