বিপ্লবীদের হৃদয়াবেগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২১:১৫ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
মানুষের জীবন বৈচিত্র্যময়। অপরিসীম বৈচিত্র্যের সমষ্টি এই জীবন। মানুষের আয়ুষ্কাল বেশি দীর্ঘ নয়। জীবন যেমন সত্যি তেমনি জীবনে সুখ-দুঃখও স্বাভাবিক। এই সুখ-দুঃখ ও আরো নানা ঘটনার পাশাপাশি জীবনে প্রেমও আসে। এই প্রেমের অনুভূতি স্বর্গীয় সুখ এনে দেয়। সমাজ বদলের রাজনীতি যারা করেন, যারা বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজকে বদলে দিতে চান বিশ্বের সেই নামি-দামি বিপ্লবীদের জীবনেও প্রেম এসেছে। এই প্রেম বিপ্লবী চেতনায় শক্তি যুগিয়েছে, চেতনাকে শাণিত করেছে। আমরা যদি বিপ্লবীদের জীবন নিয়ে অনুসন্ধান করি, গবেষণা করি তা হলে এই সত্য আবিষ্কার করা সহজ হবে।
হো চি মিন
ভিয়েৎনামের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হো চি মিন জনগণের মুক্তি, স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তার জন্ম ভিয়েৎনামের একটি ক্ষেত মজুর পরিবারে।
মিন ভিয়েৎনাম স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই ভিয়েৎনামের স্বাধীনতা এসেছে।
বিপ্লবী হো চি মিনের জীবনে প্রেম এসেছিলো। তিনি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রীর নাম তাং তুয়েভ মিন। এক বছর তারা একত্রে বসবাস করেন। তিনি যখন পলায়ন করে চীনে যান, তখন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। নিয়তি তাদের আর এক হতে দেয়নি।
ওরতেগা
ওরতেগার পুরো নাম ডেনিয়েল ওরতেগা। একটি দিনমজুর পরিবারে তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১১ নভেম্বর। ২০০৭ সাল থেকে তিনি নিকার গুয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তার জীবনে একজন নারীর কথা বারবার এসেছে। তিনিও একজন বিপ্লবী। তার নাম রোজারিও মুরিল। তিনি রোজারিও’র প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন। মাঝখানে ডেনিয়েল একটি বাজে ধরনের সেক্স স্ক্যান্ডালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ভøাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন
মার্কসবাদী রুশ বিপ্লবী লেনিন অক্টোবর ও মহান নভেম্বর বিপ্লবে বলশেভিকদের প্রধান নেতা ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান এবং লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা। তার জীবনে প্রেম নিয়ে আসেন স্কুল শিক্ষিকা নাদিয়া। ১৮৯৪ সালে তাদের পরিচয় ঘটে। ১৮৯৮ সালে লেনিন নাদিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৩২ সাল পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য জীবন সুখে ভরা ছিল।
ফিদেল কাস্ত্রো
অপরিসীম সাহসী এক বিপ্লবীর নাম ফিদেল কাস্ত্রো। বিশ শতাব্দীর এক বিখ্যাত বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক কাস্ত্রো। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রায় চার যুগ বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন ফিদেল কাস্ত্রো। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্ষমতা থেকে সরে যান এবং তার ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রোকে ক্ষমতায় বসান। কাস্ত্রো অনেক নারীর প্রেম পেয়েছেন। এসব নিয়ে নানা মুখরুচক কথাবার্তা ছিল তার সম্পর্কে। কাস্ত্রোর প্রেমিকা নাটি রিভোল্টাকেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন। কাস্ত্রোর নামের সঙ্গে প্রেম-নারী ও সেক্স মিশে গিয়েছিল। আরেক নারী নাম সেলিয়া সানচেস মানদুলের সঙ্গে বিপ্লবী কাজের মধ্যদিয়ে ফিদেলের প্রেম জমে ওঠেছিল। গোপন বার্তা আদান-প্রদানে সেলিয়া হঠাৎ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বহু নারীর সঙ্গে কাস্ত্রোর উঠ-বস থাকলেও বিপ্লবের মহিমাটাই ফিদেলকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
চে গুয়েভারা
চে গুয়েভারা নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবী হয়েও বার বার প্রেম করেছেন, একাধিক নারীকে ভালোবেসেছেন। বিয়ে করেছেন একাধিক। চে প্রথমে প্রেমে পড়েন তার এক সহপাঠিনীর সঙ্গে। তখন তারা ডাক্তারী পড়ছিলেন। কিন্তু বিপ্লব সে প্রেমকে আগাতে দেয়নি। ডাক্তারী পাশ করেও চে ডাক্তার হননি, হয়েছেন বিপ্লবী। গুয়েতেমালায় চে’র রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয় আর এখানেই প্রেমে পড়েন হিলদা গাড়িয়ার সঙ্গে। চে দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়েন অ্যালাইদ মার্চের সঙ্গে। হিলদার সম্মতি নিয়ে তাকে ছাড়তে পারলে তিনি অ্যালাইদাকে বিয়ে করবেন ভেবেছিলেন। হিলদা তাতে সম্মত হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে চে অ্যালাইদাকে বিয়ে করেছিলেন। পরে তানিয়া নামের এক সুন্দরীর প্রেমে পড়েছিলেন চে।
মাও সে তুং
চীন বিপ্লবের নায়ক ছিলেন মাও সে তুং। তিনি চীনা মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও সমাজতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদে তার তাত্ত্বিক জ্ঞান, সমর কৌশল ও কমিউনিজমের নীতি ‘মাওবাদ’ নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এক সময় সোভিয়েত পার্টির সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয় এবং এর রেশ ধরে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম জীবনে ১১ বছরের এক মেয়ের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই মেয়ের সঙ্গে তিনি ঘর করেননি। মাও এর জীবনে বহু নারী এসেছে। তার ৪ জন স্ত্রী ছিল এবং সন্তানের সংখ্যা ছিল ১০ জন। এর মধ্যে দুই স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রেম করে বিয়ে হয়।
জোসেফ স্টালিন
জোসেফ স্টালিন ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীকে পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। জোসেফ কট্টরপন্থী ও নিপীড়নকারী ছিলেন। তিনি বিরোধী মতের অনেককে হত্যা করেন। তবে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকা এই কট্টর নেতার জীবনেও প্রেম এসেছিল। ৩০ বছর বয়সে তিনি ১৩ বছরের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেন। মেয়েটিকে তিনি ধর্ষণও করেন। এই প্রেমিকার নাম ছিল লিডিয়া। ব্যক্তিগত জীবনে স্টালিনের বহু প্রেমের ঘটনা আছে। তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রেম করেই বিয়ে করেছেন তিনি।
বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত গোপনীয় জীবন সম্পর্কে বেশি জানা যায় না। এসব নিয়ে বেশি কথাও হয় না। পাবলিক-জনতা তা জানার সুযোগও পায় না। অথচ তাদের জীবনে অনেক ঘটনা থাকে, কেলেঙ্কারী থাকে। তাদের বিপ্লবী আভিজাত্যের আড়ালে এসব চাপা পড়ে যায়। তাদের রাজনীতি, দেশপ্রেম সামনে আসে। প্রেমিকার ভালোবাসা বিপ্লবী কাজে তাদের প্রেরণা ও শক্তি যুগায়।
তথ্যসূত্র: বিপ্লবীদের প্রেমকাহিনী ‘রকমারি’ কলাম, লেখক: রণক ইকরাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন ২ মার্চ, ২০১৯
লেখক : সিনিয়র কলামিস্ট।