সিলেটে বিক্ষিপ্ত পিকেটিং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৫৪:৫৫ অপরাহ্ন
বিএনপি নেতা পংকীসহ ১২ নেতাকর্মী গ্রেফতার, খুলেনি দোকানপাট
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে গতকাল রোববার উত্তপ্ত ছিলো সিলেট। সিলেটের স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং করেছে হরতালকারীরা। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পৃথক অভিযানে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরদিকে হরতালের কারণে সিলেট নগরীর বিপনী বিতানগুলো বন্ধ ছিলো। সিলেট থেকে ছেড়ে যায়নি দূর পাল্লার কোন বাস। গণপরিবহন চলাচল করেছে সীমিত পরিসরে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর অবস্থানে ছিলো আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে নগরীর মহাজনপট্টির গলি থেকে ২০/২৫ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে জেল রোড পয়েন্টে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় তারা রিক্সা চলাচলে বাধা দেয়। তবে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে বিএনপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন নেতাকর্মীরা। তবে বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকতে পারেনি তারা। মিছিল নিয়ে জেলরোডের দিকে চলে যায়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জিন্দাবাজার পয়েন্ট ও কাজি ইলিয়াস এলাকায় সড়কে তাঁতিপাড়ার গলি থেকে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী হঠাৎ বের হয়ে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা দাঁড়াতে পারেনি রাস্তায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীদের দিকে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এসময় পিকেটিংকারী একজনের ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে। ফাঁকা গুলি করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে আশেপাশে অলিগলিতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে নগরীর দরগাহ গেইটে একটি রিকশায় আগুন দেয় পিকেটাররা। এ সময় দৈনিক খবরের কাগজ এর ক্যামেরাপার্সন মামুন হোসেন এর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
সকাল ৯টার দিকে নগরীর লন্ডনী রোডের হাজীপাড়ার মুখ থেকে ৩০-৩৫ টি মোটরসাইকেলে করে বিএনপি নেতাকর্মীরা বের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ আসার আগে তারা এরপর সেখান ত্যাগ করে।
অপরদিকে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে গাছ ফেলে অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কোহিনূর আহমদ ও সহ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম। প্রায় একই সময়ে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার তেতলিতে টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহাসড়কে যান চলাচল ছিলো কম।
নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার রিকশা চালক আল-আমিন বলেন, ভোরে রিকশা নিয়ে বের হয়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় যাই। শরীর একটু ক্লান্ত হলে বিশ্রামের জন্য জিন্দাবাজার এলাকায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, কিন্তু কিছু সময় পরপর বিকট আওয়াজ কানের মধ্যে লাগে। মনে হয়েছিল এই বুঝি সবকিছু উড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ভয়ে ভয়ে রিকশা চালাতে হয়েছে।
অপরদিকে, গতকাল রোববার সকাল ১০ টায় দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল, হুমায়ুন রশিদ চত্বর,কদমতলী বাসস্ট্যান্ড ও পাবনা পয়েন্টে দেখা যায় প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিলো। দিনভর র্যাব পুলিশ সিআরটিসহ আইনশৃংখলা রক্ষা কারীবাহিনীর সদস্যরা মহড়া দিচ্ছিলেন। এছাড়া সিলেট নগরীর কদমতলী কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকেও কোন বাস ছেড়ে যায়নি।
এছাড়া, জামায়াতের উদ্যোগে নগরীর মিরাবাজার এলাকায় একটি মিছিল বের করা হয়। এ সময় তাদেরকে রাস্তায় একটি টায়ার পুড়াতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, নগরীতে গণপরিবহন চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। তবে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা, সিএনজিসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। দোকানপাট ছিলো বন্ধ। হরতালের ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কর্মজীবী লোকজনকে। গণপরিবহন কম থাকার কারণে তাদের ভোগান্তির পাশাপাশি গুণতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া।
অপরদিকে, হরতাল চলাকালে বিকেল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮ বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকিও রয়েছেন। এছাড়া আটককৃতদের মধ্যে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহমদ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবদল নেতা মোহাম্মদ আব্বাস।
কতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ পুলিশের সাথে বিএনপির ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আরো কিছু নেতাকর্মী আটক আছেন। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তদন্ত চলেছ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ (পিপিএম) বলেন, পুলিশ সতর্ক ছিলো। তিনি বলেন, নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ৮ জনকে আটক করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকিও রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে বিএনপি এবং জামায়াতের লোকজনও রয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাদের মধ্যে বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা দায়ের করা হবে।
হরিপুর থেকে ৪ বিএনপি কর্মী আটক
জৈন্তাপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা: গতকাল রোববার সকালে সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়কের হরিপুর বাস-স্টেশন এলাকায় পিকেটিং করার সময়ে গাড়ি’তে হামলা চেষ্টার অভিযোগে ৪ বিএনপি’র কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হচ্ছে-জৈন্তাপুর উপজেলার লামা শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে হরিপুর বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শোয়েব আহমদ (২৮), হেমু দত্তপাড়া গ্রামের জমছিদ মিয়ার ছেলে কৃষক বদরুল ইসলাম (৩৫), বাগেরখাল দলইপাড়া গ্রামের হাফিজ আব্দুল মজিদের ছেলে আরিয়ান আহমদ এনাম এবং উপর শ্যামপুর গ্রামের হাফিজ উল্লার ছেলে নাছির আহমদ।
জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার (ইনচার্জ) মো: তাজুল ইসলাম (পিপিএম) ৪ জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে, দেশব্যাপী বিএনপি’র আহবানে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল জৈন্তাপুর উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে পালিত হয়েছে। কোথায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সিলেট-তামাবিল-জাফলং মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ ছিল।
তবে, বিক্ষিপ্তভাবে কিছু মালবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। বিকেল ৪টায় উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন হরতালের প্রতিবাদ জানিয়ে এক শান্তি মিছিল বের করেন।