হরতালে সহিংসতা: সিলেটে ৯ মামলায় বিএনপি-জামায়াতের সহস্রাধিক আসামী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১:০০:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : হরতালে সহিংসতার ঘটনায় সিলেট মহানগর ও জেলায় ৯টি মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। মহানগর এলাকায় ৫টি এবং জেলায় ৪টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মহানগরে ৫ মামলা ঃ সিলেটে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা গত রোববারের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা ৫টি মামলায় দুই সংগঠনের প্রায় ৬শ’ নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, জিন্দাবাজারে নাশকতার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় এস আই শাহ আলম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আটক হওয়া নগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীসহ ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। একই থানায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর থানায় সরকারি গাড়ি ভাঙচুরে চালক এবং দক্ষিণ সুরমা ও জালালাবাদ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এসব মামলায় ৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৪৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে পুলিশ এসল্ট, জননিরাপত্তা আইনের ধারাসহ নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, গত রোববার হরতালকালে আটক ৬ জনকে গতকাল সোমবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে বিএনপি নেতা কাইয়ুম জালালি পংকী ছাড়াও অন্যরা হলেন একই দলের সুনামগঞ্জ জেলা সদরের রংগারচর আমবাড়ি গ্রামের ইমরান আহমদ, নগরীর নবাবরোডের ৮৬ নং বাসার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল ফাহিম, দোয়ারাবাজার উপজেলার কান্ডারগাঁওয়ের ইমরান হোসেন, নগরীর দক্ষিণ সুরমার ২৮ নং ওয়ার্ডের বরইকান্দির নাদিম আহমদ ও একই এলাকার ওয়াহেদুল ইসলাম শহিদ।
পুলিশ জানায়, গত রোববার হরতালকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৮০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, একটি টিয়ারগ্যাস ও ১৫টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। দায়িত্ব পালনকালে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
জেলায় ৪ মামলা ঃ হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাংচুর ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় সিলেট জেলায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে এজহারনামীয় ৭০ জন ও অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলার গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় পৃথকভাবে পুলিশ বাদী হয়ে এই ৪টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৭জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিগঞ্জ বাজারস্থ যাত্রী ছাউনির সামনে জকিগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের উপর বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে অবস্থান করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশকে প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল বোমা নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে হামলার অভিযোগে উঠে। এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ২২ নেতাকর্মীর নাম এজাহারভুক্ত করে ১০০ থেকে ১৫০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতা সাব্বির আহমদকে (৩৫) গত রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের জালাল আহমদ ককা মিয়ার ছেলে।
এদিকে, হরতাল চলাকালে জৈন্তাপুরের সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের হরিপুর বাস-স্টেশন এলাকায় পিকেটিং করার সময় গাড়িতে হামলা চেষ্টার অভিযোগে বিএনপির ৪ কর্মী-সমর্থককে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলার লামা শ্যামপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রবের ছেলে হরিপুর বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শোয়েব আহমদ (২৮), হেমু দত্তপাড়া গ্রামের জমছিদ মিয়ার ছেলে কৃষক বদরুল ইসলাম (৩৫), বাগেরখাল দলইপাড়া গ্রামের হাঃ আব্দুল মজিদের ছেলে আরিয়ান আহমদ এনাম, উপর শ্যামপুর গ্রামের হাফিজ উল্লার ছেলে নাছির আহমদ।
এছাড়া, পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা দায়ের করে গোলাপগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায়। এসময় ২ থানায় ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জের মোল্লাগ্রামের আব্দুশ শহীদ (২৭) ও গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের নলজুড়ী গ্রামের সমছুল ইসলামের ছেলে আবুল কাশেমকে (২৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মো. সেলিম জানান, চারটি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।