ওসমানীনগরে অধ্যক্ষ শায়খুল ইসলাম হত্যা মামলায় সহকর্মী লুৎফুরের মৃত্যুদন্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১:১২:৫০ অপরাহ্ন
পৃথক মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন ও একজনের ১৪ বছরের কারাদন্ড
স্টাফ রিপোর্টার: ওসমানীনগরের চাঞ্চল্যকর শেখ ফাজিলাতুন্নেছা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শায়খুল ইসলাম হত্যা মামলাসহ সিলেটের আলোচিত দুটিসহ চার মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ১ জনের মৃত্যুদন্ড, ২ জনের যাবজ্জীবন এবং ১ জনকে ১৪ বছরে সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের ওসমানীনগরের চাঞ্চল্যকর শেখ ফাজিলাতুন্নেছা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শায়খুল ইসলাম হত্যা মামলার প্রধান আসামি লুৎফুর রহমানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি লুৎফুর রহমান দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের তাহির আলীর ছেলে এবং ফজিলাতুন্নেছা মাদ্রাসার বাংলা বিষয়ের প্রভাষক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শায়খুল ইসলাম মোটরসাইকেল যোগে মাদ্রাসায় যাচ্ছিলেন। ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা সড়কের মুখ এলাকায় পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি প্রাইভেট কার মোটরসাইকেলসহ তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠে একই মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক লুৎফুর রহমান পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে লুৎফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (দায়রা নং-৬৫৩/২২, ওসমানীনগর জিআর-৩০২/১৯ ধারা ৩০২/৩৪)। মামলায় দীর্ঘ শুনানী শেষে সোমবার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে মামলার প্রধান আসামি লুৎফুর রহমানকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
অপরদিকে, সিলেটের কানাইঘাটে নিজাম উদ্দিন হত্যা মামলায় এক আসামীর যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত। সেই সঙ্গে রায়ে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। দ-প্রাপ্ত রুহেল মিয়া ওরফে রুকেল (৩১) কানাইঘাটের রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্গত খালাইউরা এলাকার মহরম আলীর পুত্র। অপর ধারায় তাকে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদ-, ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও একমাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে (দায়রা নং-৩৪৫/২৩ কানাইঘাট জিআর ১২০/২২ ধারা ৩০২/৩৪)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই সকালে কানাইঘাটে সুরমার পাড়ে খালাইউরা নামক স্থান থেকে নিজাম উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিজাম উদ্দিন স্থানীয় রাজাগঞ্জ বাজারে চানা-পিঁয়াজুর ব্যবসা করতেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই নিহতের ভাই এনাম উদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এতে বলা হয়, ২০২২ সালের ১২ জুলাই রাত ৯টা থেকে ১৩ জুলাই রাত ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় তাকে হত্যা করা হতে পারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ শর্মা তদন্তপূর্বক রুহেল মিয়া ওরফে রুকেলের (৩১) বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (নং-২৪০/২২) দাখিল করেন। অভিযুক্ত রুকেল হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বলেন, নিজাম উদ্দিন তার স্ত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। সেই ক্রোধ থেকে স্ত্রীকে দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে নিজাম উদ্দিনকে বাড়িতে নেন রুকেল। সেখানে মাথায় মুগুর দিয়ে উপুর্যুপরি আঘাত করে হত্যার পর সঙ্গে থাকা ২৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন।
মামলাটি আদালতে বিচারের জন্য দায়রা ৩৪৫/২৩ মূলে রেকর্ড করে ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারকার্য শুরু হয়। মামলায় ২৪ সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং আসামিপক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জ্যোৎ¯œা ইসলাম।
অপরদিকে, গোয়াইনঘাটের একটি মামলায় আফতাব উদ্দিন নামের এক আসামীকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মামলা দায়রা নং-১০৮১/২২। মামলার রায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এ মামলায় অপর আসামি আমিনুলকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জৈন্তাপুরের মাদক আইনের একটি মামলায় আবুল হাসনাত নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সাথে অর্থদন্ড করা হয়। দায়রা নং-৬৬৩/২২ জৈন্তাপুর জিআর নং-১৫/২২ ধারা ৩০২।
সিলেটের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন জানান, আদালত চারটি পৃথক মামলায় একজনকে মৃত্যুদন্ডসহ নানা মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। মামলাগুলোর মধ্যে তিনটি হত্যা মামলা ও একটি মাদক মামলা ছিলো।