শীতকালীন বাত-ব্যথা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১:৪৪:০২ অপরাহ্ন

মো. লোকমান হেকিম
শীত এসেছে। বাতের রোগীরা আতঙ্কিত। ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না যে, বাত ব্যথা কী যন্ত্রণাদায়ক। বাত অস্থিসন্ধিতে হয়, মাংসপেশিতে হয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এর শিকার হতে পারে। হাতের ও পারয়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও জ্বালা-যন্ত্রণা। কিভাবে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? আপনার হাত-পায়ের সন্ধি কখনো শক্ত হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে প্রথম সমস্যা এটি। অস্বস্তি, জ্বালা-যন্ত্রণা ও ব্যথা। চিকিৎসক বলেছেন, আপনি জযবঁসধঃড়রফ অৎঃযৎরঃরং রোগে ভুগছেন। হয়তো দু-তিন মাস ধরে ভুগছেন। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছেন। কিছুটা কমেছে, কিন্তু ভালো হয়নি। আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা যাওয়া অস্থিসন্ধিতে আক্রমণ করেছে। অস্থিসন্ধির লালা কমে গেছে। বাতে আক্রমণ করলে অস্থিসন্ধি গরম, যন্ত্রণাদায়ক ও জ্বালা-যন্ত্রণা হয়। সকালে অস্থিসন্ধি আড়ষ্ট হয়ে যায়। কারণ, ওখানে এনজাইম ও রসায়ন কমে গিয়ে অস্থিসন্ধির পেশি ও হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এ জ্বালা-যন্ত্রণা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তাই বিশেষ গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা না করালে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ রোগের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তবে তারা ধারণা করেন, এর সাথে হরমোন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দায়ী। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এটা বংশগত।
গবেষকেরাও গবেষণায় দেখেছেন, এই রোগ বংশীয় বা জিনসংশ্লিষ্ট। ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস এর সাথে যুক্ত হয়ে এ রোগকে বাড়িয়ে দেয়। বাত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের বেশি আক্রান্ত করে। এখানে হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ধূমপান ও স্থূলতা এই রোগ বাড়ায়। বাত হঠাৎ করে আক্রমণ করতে পারে। প্রথম দিকে এক বা দু’টি সন্ধিতে এবং পরে সব সন্ধি আক্রমণ করতে পারে। জ্বালা-যন্ত্রণা হয়। কাউকে ধীরে ধীরে আবার কাউকে হঠাৎ আক্রমণ করে। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই এর মোকাবেলা করা অত্যাবশ্যক। যদি দেখা যায় অস্থিসন্ধি ফুলে গেছে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে কমলো না, অবিলম্বে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কোনো রকম টেস্টে কিছু ধরা না পড়ে, তাহলে শারীরিক পরীক্ষা ও উপসর্গ বা লক্ষণ রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, ওটা জযবঁসধঃড়রফ অৎঃযৎরঃরং নিশ্চিত হতে হাত, কব্জি পায়ের পাতা পরীক্ষা করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীকে ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে হবে। এই লক্ষ্যে রোগীকে গবঃযড়ঃৎবীধঃব, ঐুফৎড়পযষড় য়ঁরহব- জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে। এগুলো সব খওয়ার ওষুধ। তবে গবঃযড় ঃৎবীধঃর রহলপবঃরড়হও দেয়া যায়। এসব ক্রিয়া করতে কিছুটা সময় লাগে। তাই চিকিৎসকেরা অন্যান্য ড্রাগ দেন। ওষুধের সাথে সাথে হাঁটাচলা বা অঙ্গ চালনা প্রয়োজন। এক জায়গায় শুয়ে-বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে। ডাক্তার ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ দেন। অবশ্য দীর্ঘ দিন ব্যথানাশক ওষুধ ক্ষতিকর। প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক থেরাপি নিলেও উপকার পাওয়া যায়।
গবেষকদের মতে, হরেক রকম ফলমূল ও শাকসবজি খেলেও উপকার পাওয়া যায়। যেমন- আঙুর, রসুন, আদা, ব্রকলি, ওয়ালমাটস, স্পিনাক পাতা, হরেক রকম বেরিস ইত্যাদি খেলে উপকার পাওয়া যায়। যথেচ্ছ খেতে পারেন- * শাকসবজি, লতাপাতা, আটা ইত্যাদি। * দধি, দুগ্ধজাত দ্রব্য যাতে চর্বি কম। * ডিম খেতে পারেন। * ননিবিহীন বা কম ননিযুক্ত দুধ খেতে পারেন। * ৮ থেকে ১৬ গ্লাস পানি। * শর্করা বা চিনি বা মিষ্টকারী দ্রব্য ছাড়া চা বা কফি পান করতে পারেন। * নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। * মিষ্টবিহীন ফল খাবেন। রান্নায় অলিভঅয়েল ব্যবহারেও উপকার হয়। ওষুধ, জীবনযাপনের পরিবর্তন ও ব্যায়াম দ্বারা বাত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যখন ওষুধ, ব্যায়াম ও জীবনযাপনের পরিবর্তনে কোনো কাজ হয় না, তখন সর্বশেষ ব্যবস্থা হলো সার্জারি। অস্থিসন্ধির পরিবর্তন বা রিপ্লেসমেন্ট। এ ছাড়া এমন অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
লেখক : চিকিৎসক।