গণপরিবহনের অভাবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ৬:০৩:০৫ অপরাহ্ন
বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে সিলেটে শেষ হলো তিনদিনের অবরোধ ॥ বাস-পিকআপ ভাঙচুর ॥ সিলেটে ও সুনামগঞ্জে আটক ১৩
স্টাফ রিপোর্টার : বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটেও বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের তৃতীয় দিন শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছে। শহরের মধ্যে কোথাও পিকেটিং করতে দেখা যায়নি অবরোধ আহবানকারীদের। তবে, বিভিন্ন স্থানে সড়কে ঝটিকা মিছিল ও টায়ারে আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সিলেটে এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। অবরোধের নামে নাশকতার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার আরো ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে শাহপরান (রহ:) থানায় ২ জন এবং জালালাবাদ থানায় ১ জন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, অবরোধের তৃতীয় দিনে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও শান্তিগঞ্জে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপির ১০ জন নেতা-কর্মী আটক হয়েছে। এর মধ্যে ধর্মপাশায় বিএনপি সভাপতিসহ ৯ জন এবং চোরাগোপ্তা হামলায় গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে শান্তিগঞ্জে যুবদল নেতা আটক হয়েছেন।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধের তৃতীয় দিনে সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। ব্যক্তিগত ও ছোট যানবাহন চলেছে অল্প পরিমাণে। নগরী ও আশেপাশে সিএনজি অটোরিক্সাসহ ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করছে। গণপরিবহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন অনেক যাত্রী। বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অনেককেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। তবে, বিকেলের দিকে অবরোধের উত্তাপ অনেকটা কমে আসে। নগরীর চিত্র অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো যাত্রার প্রস্তÍুতি নিতে দেখা গেছে। নাশকতা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও মাঠে ছিলেন। সকালে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী বাইপাস এলাকায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। তবে, এসময় পুলিশ আসতে দেখে দ্রুত রাস্তা থেকে সঁটকে পড়ে তারা।
দক্ষিণ সুরমা প্রতিনিধি জানান, বিএনপির ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ সুরমায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। হঠাৎ করে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী দক্ষিণ সুরমার অতিরবাড়ি এলাকায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে গাছের টুকরো ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা একটি বাস ও কয়েকটি কাভার্ড ভ্যান ভাঙচুর করে। তবে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সটকে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলের দুপাশে কিছুক্ষণ যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ যান চলাচল স্বাভাবিক করে। এছাড়া, সকালে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকায় রাস্তার মুখে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে ১৫-২০ জন ছাত্রদল-যুবদল নেতাকর্মী টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ সামছুদ্দোহা পিপিএম রাতে ও সকালে সংঘটিত পৃথক ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। আটক ব্যক্তি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
শান্তিগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বিএনপির ডাকা সর্বাত্মক অবরোধের শেষ দিনে হঠাৎ করেই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে পিকেটিং করার সময় একটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সাহিদ মিয়া (৩০) নামের এক যুবদল নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খালেদ চৌধুরী। আটক সাহিদ মিয়া উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও চন্দপুর নোয়াবাড়ির মৃত রশিদ আলীর পুত্র।
ধর্মপাশা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ধর্মপাশায় অবরোধের শেষ দিনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মোতালেব খানসহ ৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব বাজারস্থ উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় থেকে তাদের আটক করে ধর্মপাশা থানা পুলিশ। আটক অন্য নেতাকর্মীরা হলেন- উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. আব্দুল হক, সদস্য হারুনুর রশিদ, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শওকত আলী বেপারী, যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল রহমান কাঞ্চন, ইকবাল হোসেন, আবুল বাশার, সদস্য জুবায়ের আলম ও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ওবায়দুর রহমান মজুমদার। ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে এ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৌলভীবাজার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের টানা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পালন করেছে। জেলা বিএনপির উভয় গ্রুপ পৃথক পৃথকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শহরে রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে শহরের শমসেরনগর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন বক্স, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহিতুর রহমান হেলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, অর্থ-সম্পাদক ও পৌর বিএনপি সদস্য সচিব মনোয়ার আহমেদ রহমান, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক স্বাগত কিশোর দাশ চৌধুরী, পৌর কাউন্সিলর আনিছুজ্জামান বায়েছ, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রুবেল মিয়া ও জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব মোনায়েম কবির প্রমুখ।
এদিকে সভাপতি বলয়ের নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের থানা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এতে অংশ নেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুন, সহ-সভাপতি ফয়সল আহমদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম রিপন, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ রশিদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোহিত ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন সিলেট ছিলো অনেকটা উত্তপ্ত।