শোকাবহ জেল হত্যা দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ৬:২৮:৩০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায় এই দিনটি। পনের আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জাতি আজ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী এই চার জাতীয় নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশে পালিত হবে শোকাবহ এই দিনটি। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়। দেশের এই চার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের পর কারাগারে পাঠিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে গুলি এবং পরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জাতীয় এ চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির পিতাকে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালীর স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মোশতাক ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র ৮২ দিন। এরই মধ্যে দেশকে পাকিস্তানীকরণের দিকে এগিয়ে নেয়া ছাড়া তার সবচেয়ে বড় দুটি কীর্তি হলো জেলে জাতীয় চার নেতাকে খুন এবং ১৫ আগস্টের খুনীদের বিচার করা যাবে না-দায়মুক্তির অধ্যাদেশ জারি করা। প্চাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি এই অধ্যাদেশ জারি করেন এবং জেলে নির্মম হত্যাকান্ড ঘটান ৩ নভেম্বর ভোর রাতে। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে। এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে; সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। তবে সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। সে সময় বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে।
এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ. সি. এমপি’র নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে এ আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি :
ঐতিহাসিক দিবসটি পালনের জন্য সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ শুক্রবার বাদ আসর হযরত শাহজালাল (রহ:) দরগাহ মসজিদের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং আলোচনা সভা। কর্মসূচিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।