হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
১৪০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ৫:৪১:৫৫ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জ থেকে মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল : বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। ১৮৮৩ সালে শহরের কেন্দ্রস্থলে সাড়ে ৯ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের পুরাতন একাডেমিক ভবনগুলো সহজেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আজ ৪ নভেম্বর। দেশের প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠ হবিগঞ্জ গভর্ণমেন্ট হাইস্কুলের ১৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রাক্তন ছাত্রদের উদ্যোগে এবং বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী ২০২৩ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে শহরে এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। অনন্য স্থাপত্য বৈশিষ্টের স্বাক্ষর বহনকারী স্কুল ভবন, প্রাঙ্গণ, সংলগ্ন সড়ক এবং ঐতিহ্যবাহী তিনকোণা পুকুরপাড় এলাকাটিকে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবত দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র ও তাদের আত্মীয় স্বজনের পদচারণায় গভীর রাত পর্যন্ত মুখরিত হয়ে উঠে স্কুল প্রাঙ্গণ। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে সফল ও স্বার্থক হউক এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রসিক লাল সেন এমএ ছিলেন স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক (১৮৮৩-৯৫)। এক সময়ে বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক ও খ্যাতনামা সাহিত্যিক ড. দীনেশ চন্দ্র সেন এবং উপ-মহাদেশের খ্যাতনামা বাগ্মী বিপিন চন্দ্র পাল স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯১১ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। প্রাচীন এই স্কুলটি ১৮৪৩ সালে শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার সংলগ্ন লস্করপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। লস্করপুরে তখন ছিল হবিগঞ্জ মহকুমার প্রধান কার্যালয়। ১৮৬৩ সালে ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এমই স্কুলে উন্নীত হয়। ১৮৮১ সালে মহকুমা সদর লস্করপুর থেকে হবিগঞ্জে স্থানান্তরিত হওয়ায় অন্যান্য অফিস আদালতের সাথে এ বিদ্যালয়টিও হবিগঞ্জ সদরে স্থানান্তরিত হয়। ১৯১১ সালে সরকারি করণের পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কুঞ্জবিহারী ঠাকুরতা।
উল্লেখযোগ্য প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন বিপিন চন্দ্র রায় বর্মন, রজনীচন্দ্র দাশ, খান সাহেব মফিজুর রহমান, রায় সাহেব অবিনাশ চন্দ্র চৌধুরী, আলহাজ¦ সৈয়দ হাফিজুর রহমান, আবুল ফয়েজ খান চৌধুরী, মুহম্মদ সানাওয়ার বখত চৌধুরী, মো. আব্দুল হাই, কাজী বদর উদ্দিন হায়দার, আব্দুল গফুর মন্ডল, মো. মহিউদ্দিন, মো. আব্দুস ছালাম, মো. গফফার আহমেদ, মো. হাবিবুল ইসলাম, নাজমুন নাহার খানম, শেখ আলফাজ উদ্দিন প্রমুখ।
১৯২২ সালে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে বিদ্যালয়ের দুটি প্রধান ভবন ভস্মীভূত হয়। এসময় প্রায় ৫ বছর শ্রেণীকক্ষ হিসেবে অস্থায়ী শেড ব্যবহার করা হয়। ১৯২২ সালের মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫৫ জন ছাত্রের মধ্যে ৪৫টি প্রথম বিভাগ ৯টি, দ্বিতীয় বিভাগ ও ১টি তৃতীয় বিভাগসহ সকলেই কৃতকার্য হয়। এসব ছাত্রের মধ্যে ৫ জন স্টার মার্কস এবং ৪৬ জন লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করে। এই বিস্ময়কর ফলাফলের জন্য বিদ্যালয়টি তদানীন্তন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে ১৯২৫ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ১৯২৭ সালে ৪টি সুদৃশ্য ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে ৬টি একাডেমিক ভবন, অডিটরিয়াম, স্কাউট ও ল্যাবরেটরি ভবন, ছাত্র হোস্টেল ও হোস্টেল সুপারের বাসভবন। মুসলিম ছাত্রাবাসের জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনটি এখন শিক্ষকদের অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯২১-২২ সালে প্রধান শিক্ষকের জন্য নির্মিত বাসভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় তা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে ব্যায়ামাগার, মসজিদ, বিজ্ঞান ভবন। লাইব্রেরীতে রয়েছে ৫ সহ¯্রাধিক বই। বড় ৪টি পুকুরের একটিতে একসময়ে লাল শাপলা ফুলের সমারোহ থাকলেও এখন আর তা নেই। প্রচুর গাছপালা ও ফুলের বাগানে সুশোভিত স্কুলে দিনশেষে দেখা যায় বিভিন্ন জাতের পাখির আনাগোনা। পাখিদের বংশ বিস্তারের জন্য ইতিপূর্বে বড় বড় গাছগুলোতে বেঁধে দেয়া হয়েছিল মাটির কলস। অতীতের মতই বর্তমানেও বিভিন্ন পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফলাফল করছে পরীক্ষার্থীরা। স্কুলের প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীরা এখন দেশ বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সর্বশেষ ২০০২ সালে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জাকজমকপূর্ণ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।