দক্ষ যুবসমাজ ও স্মাট বাংলাদেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪২:২৩ অপরাহ্ন
মো. বেলায়েত হোসেন
জনশুমারি ২০২২ অনুসারে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ তরুণ-যুবক শ্রেণির। জনশুমারিতে দেখা যায়, ০-২৫ বছর বয়সি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ, ২৬-৬৪ বছর বয়সি ৪৪ শতাংশ, ৬৫ বছরের বেশি মাত্র ৬ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ বর্তমানে অনুকূল জনমিতিক সুবিধা (ফবসড়মৎধঢ়যরপ রিহফড়ি ড়ভ ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু) ভোগ করছে, যা একটি নির্দিষ্ট সময় ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বলবত্ থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বাংলাদেশের শ্রমবাজারে আনুষ্ঠানিকের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক শ্রম খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে, মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ দশমিক ১ শতাংশ এ খাতে নিয়োজিত এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্রমজীবীদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। সঠিক শ্রমমজুরি শিক্ষা ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত করে শ্রমবাজারের উপযোগী করার চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে যাচ্ছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ঈর্ষণীয় চাহিদা রয়েছে। জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রবাসী আয়ে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় এবং ২০২২ সালে প্রবাসীরা পাঠিয়েছে ২১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে এখনো কিছু নেতিবাচক ইস্যু রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে জড়িত আছে একশ্রেণির অসাধু দালাল। অবৈধ পথে শ্রমিক পাঠানো, প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচার, অদক্ষশ্রমিক বিভিন্ন দেশে নিয়ে অসহনীয় দুঃখ-কষ্ট-নির্যাতন ভোগ, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে রাজস্ব ফাঁক দেওয়া এসব দালালের কাজ। এগুলো দেশের ভাবমূর্তি ও শ্রমবাজারের জন্য নেতিবাচক। দালালরা প্রবাসীদের অল্পসময়ে বিদেশ গিয়ে টাকা উপার্জনের লোভ দেখায় এবং শ্রমিকরা সে ফাঁদে পা দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। শ্রমিকদের দক্ষ হয়ে বিদেশ যাওয়া প্রয়োজন এবং দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে অর্থ ও সম্মান দুটোই পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে তারা সচেতন নয়। এ নিয়ে সরকারের দেশব্যাপী অনেকগুলো প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও কাজ করছে।
প্রতিবছর প্রায় ২ দশমিক ২ মিলিয়ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। বর্তমান সরকার যুবকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে যুব উন্নয়ন, পল্লি উন্নয়ন বোর্ড, মহিলাবিষয়ক, সমাজসেবা, কৃষি, মত্স্য, প্রাণিসম্পদসহ অনেকগুলো দপ্তরের মাধ্যমে যুবদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা এবং স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক গঠনে যুবদের উদ্ভাবনী ধারণায় টেকনোলজি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য প্রতিটি জেলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বিশ্বায়নের এ যুগে উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (অৎঃরভরপরধষ রহঃবষষরমবহপব) কাজে লাগিয়ে দক্ষ যুব শক্তি গড়ে তোলার বিকল্প নেই। টেকনোলজি-ভিত্তিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার আইটি পার্ক গড়ে তোলার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
বিবিএসের জরিপে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) এ বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। আবার কারো কারো কর্মসংস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তিত বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ যুবদের কর্মসংস্থান বিস্তৃতে টেকনোলজি-ভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের পাশাপাশি টেকনোলজি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: সরকারি কর্মকর্তা।