নতুন মেয়রের কাছে নাগরিক প্রত্যাশা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ৯:২০:১৮ অপরাহ্ন
সৈয়দ মবনু
সিলেট একটি ঐতিহ্যবাহী শহর এবং পরে মহানগরী। ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে গৌড় থেকে জালালাবাদ, শ্রীহট্ট, ছিলট ইত্যাদি পেরিয়ে আজকের সিলেট অবশেষে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন। পৌরসভায় ছিলো সিলেট নগরী। আমাদের ছোটবেলা বাবরুল হোসেন বাবুল, পরে আ ফ ম কামাল, এরপর বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সিলেটের পৌর চেয়ারম্যান। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পৌর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সিলেটবাসীর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সিলেটকে বিভাগ করা হলো এবং বিভাগীয় শহর সিলেটকে সিটি করপোরেশন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। দ্বিতীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং তৃতীয় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আমি অতীতের আলোচনা করে লেখা দীর্ঘ করতে চাই না। আমি আমাদের সিটির কিছু সমস্যা এবং কিছু করণীয় বলতে চাই। আমরা স্থিতিশীল সমাধানের জন্য নতুন মেয়রের উদ্যোগ চাই। আমাদের অনুরোধ, নীচে বর্ণিত বিষয়গুলো নতুন মেয়র বিবেচনা করবেন।
১. সরকার প্রচুর টাকা খরচ করে ফুটপাত তৈরি করে জনগণের হাঁটাহাঁটির জন্য। কিন্তু একদল হকার এবং ব্যবসায়ী তা অবৈধভাবে দখল করে বসে থাকেন। আমরা নতুন মেয়রের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারীদের হাত থেকে ফুটপাতকে পথচারীদের জন্য মুক্ত রাখার উদ্যোগ চাই। এজন্য নতুন মেয়রকে শক্ত হাতে উদ্যোগ নিতে হবে জনগণ ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে। সিটি করপোরেশন অফিসের সামনে ফল-তরকারীওয়ালারা যেভাবে বসেন তাতে প্রচুর যানজট তৈরি হয়, এগুলো উচ্ছেদের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
২. যেখানে-সেখানে গাড়ী, সিএনজি ফোরস্টক, রিক্সার স্টেন্ড তৈরি হচ্ছে। এগুলো রোধ করার উদ্যোগ নিলে আমরা নগরবাসী কৃতজ্ঞ হবো। অবৈধ রিক্সাগুলোকে রাস্তা থেকে সরানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
৩. রাস্তার পাশের আবর্জনা নিয়মিত এবং সময় মতো পরিস্কার করতে হবে এবং সেটা রাত ১২টার পর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে পরিস্কার করতে পারলে ভালো।
৪. বৃষ্টি এলেই সিলেটের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে যায়। এ থেকে রক্ষার জন্য মহানগরের সকল জল ব্যাংকগুলোকে ভূমিখেকোদের কব্জা থেকে রক্ষা করে সংস্কার করতে হবে। ড্রেনগুলোকে সংস্কার করতে হবে এবং নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে। জলের পথ রোধ করে কোন প্রকার ঘরবাড়ি কিংবা রাস্তা, কল-কারখানা করাকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। যারা এই আইন অমান্য করবে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই সব পরিকল্পনা পাশে যে সকল অফিসার সংশ্লিষ্ট থাকবে তার অনিয়মকে শাস্তির অধীনে আনতে হবে। নিয়মিত ড্রেন, নালা পরিস্কার করতে হবে, বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে। জনগণকে নিয়মিত ড্রেন, নালা, হাওর, বিল, খাল, নদী পরিস্কার রাখা সম্পর্কে সচেতন করে রাখতে হবে। পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত সুরমা নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বলতে হবে।
৫. মহানগরের যেকোন স্থানে বাড়িঘর তৈরির সময় পানি নিস্কাশনের পথগুলোকে নির্দিষ্ট মাপে হচ্ছে কিনা তা নজর রাখতে হবে এবং তা না হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির দেয়াল ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রেন, নালা এবং নদীতে আবর্জনা ফেলাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে হবে।
৬. পাহাড় কাটা এবং পানির ব্যাংক ধ্বংস তো আইনের বইতে বেআইনী আছে, তা কার্যকর রাখতে হবে। অর্থাৎ পুকুর, খাল, বিল, হাওর ধ্বংস করলে কঠিন শাস্তির যে ব্যবস্থা আছে তা কার্যকরের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি নথিতে মহানগরে যে পুকুর রয়েছে, সেগুলো যদি অবৈধ দখলদারের অধীনে থাকে তা মুক্ত করতে হবে।
৭. প্রবাসীদের ধন-সম্পদ রক্ষার্থে সিটি করপোরেশনে পৃথক একটি সেল চালু করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়েও সেটা করতে হবে।
৮. বিমানবন্দরে যাত্রীদেরকে বিদায় কিংবা রিসিভ করতে যাওয়া মানুষদের বৃষ্টি কিংবা রোদে একটু দাঁড়ানোর জায়গা নেই। সেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
৯. মহানগরের ভেতরে যতগুলো নিম্নমানের বস্তি বা কলোনী রয়েছে, সেগুলোর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরির জন্য ভাড়াটিয়া এবং মালিকদের সাথে কাউন্সেলিং করে ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. বড় বড় কলোনীগুলোতে সিটির উদ্যোগে স্থানীয়দের সহযোগিতায় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে কমপক্ষে ওয়ান-টু পড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
লেখক : কবি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা