নগর পরিকল্পনা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ৪:২৯:৫৬ অপরাহ্ন
ভীরুরা মরার আগে বারে বারে মরে। সাহসিরা মৃত্যুর স্বাদ একবারই গ্রহণ করে। – উইলিয়াম শেক্সপিয়র।
অতীতে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি বলে খ্যাত সিলেট নগরির চেহারা আজ পাল্টে গেছে। আনেকে বলছেন, এর জন্য দায় অপরিকল্পিত নগরায়ন। একদিকে রাস্তা, ফুটপাত, ড্রেনসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, অপরদিকে দখল হচ্ছে ফুটপাত, ভরাট হচ্ছে নর্দমা। আছে অবৈধ পার্কিং। যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ। চলাচলের রাস্তাটুকুও পাচ্ছেন না পথচারিরা। এছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ঝামেলাতো রয়েছেই। এতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। এই প্রক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস।
সিলেট শহর পৌরসভা হিসেবে পরিচিত ছিলো ১৮৭৮ সাল থেকে প্রায় সোয়া শ’ বছর। ২০০২ সালে শহরটি সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তারপরেও চলে গেছে দুই দশক। ইতোমধ্যে বেড়েছে নগরির আয়তন, লোকসংখ্যা। কিন্তু নগরবাসি যেন প্রত্যাশিত স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি যতোই বেগ পাচ্ছে, ততোই যেন বাড়ছে উদ্বেগ। এখনও অল্প বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। খাল ও ছড়া উদ্ধার করা হলেও তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই। সেই সঙ্গে ভরাট হচ্ছে পুকুর-ডোবাগুলো। রাস্তা প্রশস্ত হওয়ায় যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে অবৈধ স্টেন্ড- পার্কিং। বছর কয়েক আগে নগরির কোর্ট পয়েন্টে নির্মাণ করা হয় ফুট ওভারব্রিজ। কেউই ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হয় না। তাছাড়া, নগরির আনাচে কানাচে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে সুউচ্চ ভবন। এ ক্ষেত্রে দরকার সুষ্ঠু নগর-পরিকল্পনা। বিশেষজ্ঞগন বলছেন, দেশের শহরগুলোকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে জাতীয় নগর নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। তারা বলেন, জাতীয় নগর নীতিমালার কাজ ২০০৬ সালে শুরু হয় এবং ২০১৩ সালে এসে খসড়া তৈরি হয়। কিন্তু তা এখনও আলোর মুখ দেখে নি। এছাড়া, ঢাকাসহ অন্যান্য নগরগুলোকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য ন্যাশনাল কমিটি গঠন করারও পরামর্শ দেন তারা। সর্বোপরি প্রতিটি বিভাগ, জেলায় সব শ্রেণির ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করে শহরের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি।
আসল কথা হলো, ঐতিহাসিকভাবে নগর পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। অথচ উচ্চ নগরায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের শহরগুলো ক্রমশ বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। দ্রুত নগরায়নের ফলে যানজট, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। সবুজায়ন হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাধারের দখল-দূষণ এবং নগর এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাস্তবতায় আগামি দিনের বাংলাদেশে বাসযোগ্য নগর ও জনবসতি গড়ে তুলবার লক্ষে জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের নগর পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে নগর পরিকল্পনা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া, এমনই এক সময়ে সিলেটে দিবসটি পালিত হচ্ছে, যখন নগরিতে নতুন সিটি মেয়র দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তাই আমরা আশা করছি, নতুন মেয়রের নেতৃত্বে সিলেট মহানগরি সুপরিকল্পিত ছিমছাম নগরিতে পরিণত হবে।