সিলেটে উপজেলাগুলোতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ৪:৩৭:৫১ অপরাহ্ন
ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট অঞ্চল বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, জনগণের মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, প্রাকৃতিক সম্পদের (গ্যাস, চুনাপাথর, পাথর, বালু) প্রাচুর্যতা, প্রাকৃতিক তেলের সন্ধান প্রাপ্তি, ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে থেকে সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীগণে প্রেরিত প্রচুর পরিমান রেমিটেন্স, টিলাময় এলাকা এবং যথেষ্ঠ পরিমাণ পতিত জমি এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। ইতিপূর্বে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির উদ্যোগে পরিচালিত “সিলেট অঞ্চলে প্রবাসী বিনিয়োগ: একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা” কাজের সাথে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। ক্ষুদ্র আঞ্চলিক বাজার, কাঁচামাল আনয়নে অধিক পরিবহন ব্যয়, বিপুল পরিমান নীচু এলাকায় দুরূহ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অদক্ষ জনশক্তি, জমিসংক্রান্ত সমস্যা, প্রারম্ভিক মূলধনের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদিকে সিলেট অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান কয়েকটি প্রতিবন্ধকত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, ব্যবসা বান্ধব নীতিমালা প্রনয়ন ইত্যাদি এ অঞ্চলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। সিলেট অঞ্চলের সম্ভাব্য বিনিয়োগরে খাতগুলো হলো আগর-আতর শিল্প, সিরামিক শিল্প, রাবার শিল্প, কৃষিজাত শিল্প, পর্যটন শিল্প, তথ্য-প্রযুক্তি খাত, বেত শিল্প, স্বাস্থ্য সেবা খাত, শিক্ষা খাত, ব্যাটারী ও টায়ার উৎপাদন, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপদন, ইট উৎপাদন, প্লাস্টিক শিল্প, ফুড প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রি, ক্যাবল ইন্ডাষ্ট্রি, ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রি, জৈবসার কারখানা, গবাদিপশুজাত শিল্প, চারকোল উৎপাদন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, চামরা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, গ্লাস উৎপাদন, বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইত্যাদি। বর্তমানে নতুনভাবে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত সনাক্ত করার চেষ্টা করেছি।
এ কাজের জন্য আমি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এর অবদান কৃতজ্ঞাতার সাথে স্বীকার করছি। উপজেলাগুলোর তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ী ও চেয়ারম্যানগণকে নিয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। আমি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এর সভাপতি তাহমিন আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সহ-সভাপতি মো: আতিক হোসেন, পরিচালক ফাহিম আহমদ চৌধুরী সহ পরিচালনা পরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (উপ-সচিব) জুলিয়া যেসমিন মিলি, চেম্বারের সচীব গোলাম আখতার ফারুক, উপসচীব সানু উদ্দিন রুবেল, উপসচীব আজিজুর রহিম খান মিজানসহ চেম্বারের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দকে আমাকে এ কাজে সহায়তা করার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বিনিয়োগ সম্ভাবনা :
৪৮১.১৩ বর্গ কি:মি: জুড়ে অবস্থিত গোয়াইনঘাট উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে সিলেট সদর উপজেলা ও জৈন্তাপুর উপজেলা, পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলা ও পশ্চিমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা রয়েছে। উপজেলার প্রধান নদী সারি নদী, গোয়াইন নদী এবং পিয়াইন নদী। গোয়াইনঘাটে ইউনিয়নের সংখ্যা ১২ টি এবং গ্রামের সংখ্যা ২৬৪টি। গোয়াইনঘাটের জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ৫০১ জন। গড় শিক্ষার হার ৩২.৭%। গোয়াইনঘাটে ১১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫টি কলেজ এবং ৯টি মাদ্রাসা রয়েছে। পাথর ব্যবসা, কয়লা ব্যবসা, চুনাপাথর ব্যবসা, চা উৎপাদন এবং পান উৎপাদন গোয়াইনঘাটের অন্যতম ব্যবসা। এখানে জাফলং, ফতেহপুর এবং গুলনী নামক ৩টি চা বাগান রয়েছে। জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাই ইত্যাদি গোয়াইনঘাটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশ কয়েকটি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এ সকল স্পটকে সামনে রেখে পর্যটনখাতে প্রচুর বিনিয়োগ হতে পারে এবং হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে জাফলং এর জিরো পয়েন্টে হোটেল জাফলং পয়েন্ট নামক একটি হোটেল গড়ে উঠেছে। গোয়াইনঘাটের স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পরিমান কয়লা এবং পাথর আমদানী হয় এবং দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে। গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ডেইরী ফার্ম রয়েছে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে এ খাতে আরও বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলার অনেক জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে এবং স্বল্পমূল্যে জমি ক্রয় করা সম্ভব। এখানে প্রচুর পরিমান প্রাকৃতিক ঘাস রয়েছে এবং আরও ঘাস উৎপন্ন করা সম্ভব। গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমান শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। জাফলং-এ প্রচুর পরিমাণ টমেটো, মূলা, আলু, শীম ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। হিমাগার করা সম্ভব হলে প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি দেশ এবং বিদেশ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। গোয়াইঘাটে অব্যবহৃত টিলা এবং উচুস্থান থাকার ফলে আরও চা বাগান তৈরীর মাধ্যমে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়াও পান ও সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধি করাও সম্ভব। বর্তমানে গোয়াইনঘাটে পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ রয়েছে। এগুলো চালু হলে পাথর আহরণ বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে প্রায় ৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রবাসীগণ, ক্রাশার মিল মালিকগণ এবং ট্রাক মালিকগণ লাভবান হবেন। ক্রাশার মিলগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর, লেংগুরাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে নি¤œ অঞ্চল ও বিল-হাওড় রয়েছে। এলাকায় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং মৎস্য খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব। গোয়াইনঘাটে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট তৈরী করা সম্ভব হলে দেশে এবং বিদেশে মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের যোগাযোগ ভালো হবার ফলে এবং প্রচুর পরিমান খালি জমি থাকার ফলে এখানে সোলার প্ল্যান্ট করা যেতে পারে। গ্যাস সংযোগ পাওয়া সাপেক্ষে পাওয়ার প্ল্যান্ট করার বিষয়টি পর্যালোচনা করা যেতে পারে। আলীরগাঁও ইউনিয়ন, লেংগুরা ইউনিয়ন এবং বিশেষত ফতেহপুর ইউনিয়নে রয়েছে অসংখ্য আনারসের বাগান এবং এলাকায় আনারসের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। অব্যবহৃত অসংখ্য টিলা ও উচুস্থানে আনারস, ড্রাগন ফল ও চা উৎপাদন করা যেতে পারে। এছাড়াও রাবার বাগানের মাধ্যমে রাবার উৎপাদন সম্ভব। দেশী মাল্টা, কমলা, লেবু, পান ও সুপারীর উৎপাদন প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি করা সম্ভব। গোইয়ানঘাটের রুস্তমপুর ইউনিয়ন ও তোয়াকুল ইউনিয়নে বেত উৎপন্ন হয়। গোয়াইনঘাটে বেত নির্মিত দ্রব্যাদি উৎপাদন করা সম্ভব। হাস-মুরগীর খামার বৃদ্ধি করা গোয়াইনঘাটের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই সম্ভব। গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেকেই আর্থিক অবস্থা উন্নতির সাথে সাথে নি¤œ এলাকা ছেড়ে সিলেট শহরের দিকে চলে আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত গোয়াইঘাট এলাকার মানুষে আচরণ বন্ধুত্বসূলভ এবং এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ ভালো। জাফলং এলাকার শিক্ষার হার অন্যান্য ইউনিয়নের তুললায় ভালো। বিদ্যুতের স্বল্পতা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দারিদ্রতা গোয়াইনঘাটের অন্যতম সমস্যা। গোইয়ানঘাটের প্রবাসীগণের মধ্যে ৯৫% জনগন সৌদিআরব, ওমান, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব-আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকেন। প্রায় ৫% জনগন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, আমেরিকা, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে অবস্থান করছেন। গ্যাস সংযোগ, পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে গোয়াইঘাটের বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধী বৃদ্ধি পাবে।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদন :
[পর্যটন খাত, মৎস্য খাত ও ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট, সোলার অথবা পাওয়ার প্ল্যান্ট, ডেইরী ফার্ম, হাঁস-মুরগীর খামার, আনারস, ড্রাগন ফল, লেবু, চা, পান, সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধি, শাক-সবজির উৎপাদন ও হিমাগার নির্মান। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন।]
কোম্পনীগঞ্জ উপজেলা বিনিয়োগ সম্ভাবনা :
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আয়তন ২৯৬.৭৬ বর্গ কি:মি:। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে সিলেট সদর উপজেলা, পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং পশ্চিমে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা। ধলাই, সুরমা ও পিয়াইন কোম্পানীগঞ্জের প্রধান নদী। উপজেলার মোট ইউনিয়ন ৬টি। পূর্ব ইসলামপুর, পশ্চিম ইসলামপুর, তেলিখাল, ইছাকলস, উত্তর রনিখাই এবং দক্ষিণ রনিখাই। উপজেলার শিক্ষার হার-২৮.৮%। জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার। কৃষি জমির পরিমান ৫৮,৮৭৭.৮০ একর। উপজেলায় ১৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি কলেজ, ৪টি দাখিল ও আলিম মাদ্রাসা এবং ২৫৪ টি মসজিদ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে পর্যটন খাতে বিনিয়োগের সম্ভবনা রয়েছে। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর সিলেট বিভাগের একটি অন্যতম টুরিস্ট স্পট। সাদাপাথরকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন, পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন এবং উত্তর রনিখাই ইউনিয়নে আরও হোটেল, মোটেল রিসোর্ট গড়ে উঠতে পারে। এছাড়াও উৎমাছড়া, তুড়ং ছড়া টুরিস্ট স্পট হতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলে পর্যটনগণ সরাসরি ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর থেকে উৎমাছড়া, তুড়ংছড়া, বিছানাকান্দি, মায়াবী ঝর্ণা, জাফলং যেতে পারবেন। এ এলাকাগুলোতে ভ্রমণ করার জন্য একটি কানেকটিং রাস্তা করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। পুরো এলাকাজুড়ে অসংখ্য হোটেল, মোটেল এবং রিসোর্ট গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ যাবার রাস্তাটি বেশ উন্নত। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ডেইরী ফার্ম, হাস-মুরগীর খামার গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হাওরগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়ও বিভিন্ন পুকুর এবং দীঘিতে মাছ চাষ হতে পারে। এ সকল হাওড়, পুকুর, দীঘীকে কেন্দ্র করে ইছাকলস, উত্তর রনিখাই, তেলিখাল ইউনিয়নে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট গড়ে উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের থানাসদর, টুকেরবাজার, দয়ারবাজার, পারুয়াবাজার, এলাকায় মিষ্টি, কেক দই, বিস্কুট তৈরীর কারখানা হতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হাওরগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন পুকুর এবং দীঘিতে মাছ চাষ হতে পারে। এ সকল হাওর, পুকুর, দীঘিকে কেন্দ্র করে ইছাকলস, উত্তর রনি খাই, তেলিখান ইউনিয়নে ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট গড় উঠতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের হ্যাচারী গড়ে তোলা সম্ভব। সিলেট ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা অংশের যে কোন স্থানে অটোরাইস মিল হতে পারে। থানা সদরে ছোট পরিসরে হলেও ক্লিনিক তৈরী হতে পারে। কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল এলাকায় ইতিমধ্যে অটোবিক্সস ফ্যাক্টরী হয়েছে। ভোলাগঞ্জ এবং পারুয়া এলাকায় আরও অটোব্রিকস ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা সম্ভব। নদীপথে এবং সড়ক পথে সিলেটের সাথে কোম্পানীগঞ্জের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। ভোলাগঞ্জ বর্ডার দিয়ে ভারত থেকে স্বল্পমূল্যে চুনাপাথর ও কয়লা আমদানী করা যায়। কোম্পানীগঞ্জে বালু এবং পাথর পাওয়া যায়। আমদানীকৃত চুনাপাথর দেশের বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যায়। কোম্পানীগঞ্জের পাথর, বালু, চুনাপাথর ও কয়লাকে কাজে লাগিয়ে কাটাগাংগ এবং মহাসড়কের পাশে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী গড়ে তোলা সম্ভব। কোম্পানীগঞ্জে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী হলে পরিবহন খরচ তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে। কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক রয়েছে। পার্কটি পুরোপুরি সম্পন্ন হলে এখানে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যায়। এই হাইটেক পার্কটিতে সফটওয়্যার ফার্মসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক আইটেম, মোবাইল, ক্যাবল প্রভৃতি উৎপাদন করা সম্ভব। ইতিমধ্যে ওয়ালটন, স্যামসাং প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এই পার্কটিতে প্লট ক্রয় করেছে। বর্তমানে পার্কটির কাজ চলছে। কোম্পানীগঞ্জে সোলায় প্ল্যান্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে তোলা সম্ভব। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং এখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে। পাথর ভাঙ্গার মেশিনগুলো বন্ধ থাকার ফলে বিদ্যুতের সরবরাহের তুলনায় ব্যবহার কম হয়। পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকার ফলে শ্রমিকগণ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় স্বল্প মজুরীর বিনিময়ে শ্রমিক পাওয়া যায়। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। কোম্পানীগঞ্জে শিক্ষার হার কম এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস পরিলক্ষিত হয়। কোম্পানীগঞ্জের নি¤œ অঞ্চলগুলোতে প্রায়ই বন্যা হয়ে থাকে। কোম্পানীগঞ্জে শুধুমাত্র হাইটেক পার্কে গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের প্রবাসীগণের মাঝে প্রায় ৮০% সৌদিআরব, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহে অবস্থান করছেন। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ অন্যান্য দেশে অবস্থান করছেন প্রায় ২০% কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রবাসীগন।
সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত/সম্ভাব্য উৎপাদন :
পর্যটন শিল্প, ডেইরী ফার্ম, হাঁস-মুরগীর খামার, মৎস উৎপাদন ও ফিশ প্রসেসিং প্ল্যান্ট, হ্যাচারী, মিষ্টি, কেক, দই, বিস্কুট উৎপাদন, অটোরাইস মিল, ক্লিনিক ও হাসপাতাল, অটোব্রিকস ফ্যাক্টরী, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, সফটওয়্যার ফার্ম, ইলেকট্রনিক আইটেম, মোবাইল, ক্যাবল উৎপাদন, সোলার ও পাওয়ার প্ল্যান্ট। ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিবিলিটি টেস্ট প্রয়োজন। চলবে।