এক আসামীর মৃত্যুদন্ড দুই জনের যাবজ্জীবন
২০ বছর পর দক্ষিণ সুরমায় অটোরিক্সা চালক জিলু হত্যা মামলার রায়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ৯:০৪:২৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : ২০০২ সালের ঘটনা। যাত্রী বেশে ৩ ছিনতাইকারী চালক জিলু মিয়াকে হত্যা করে বেবী ট্যাক্সি নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলাও হয়। কিন্তু বিচারকার্য দীর্ঘ বিলম্বিত হওয়ার কারণে বাদী পক্ষও মামলার খোঁজ খবর নেয়া ছেড়ে দেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
অবশেষে বাদির অনুপস্থিতিতে গতকাল রোববার বিকেলে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা। রায়ে ৪ আসামির একজনকে মৃত্যুদন্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও একজনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
এদিন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ দায়রা জজ স্বপন কুমার সরকার এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রায়ে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কাটলীপাড়ার মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ওরফে আশরাফ ওরফে আশাইকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আরও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ৩৯৪ ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দেওয়া হয়।
অপর দুই আসামি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট কামরাবন্দ গ্রামের মৌ: হোসেন আহমদের ছেলে নাজির আহমদ ওরফে নাজির ওরফে নজরুল ইসলাম ও সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি মাঝপাড়া এলাকার মোতালেব মিয়ার ছেলে আবু চান ওরফে সাব্বিরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-, প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। ৩৯৪ ধারায় আরও ১০ বছর করে সশ্রম কারাদ-,৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। রায় ঘোষণাকালে আবু চান ওরফে সাব্বির আহমদ ব্যতিত অপর আসামিরা পলাতক রয়েছেন। এছাড়া আসামি ছায়েক আহমদ ওরফে ছালেক মিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঝাঝর এলাকার চেরাগ আলীর ছেলে জিলু মিয়া পার্শ্ববর্তী নাছিমপুর এলাকার সিদ্দিক আলীর বেবীট্যাক্সি (নং-ঢাকা মেট্টো-থ-২২৫৭) ভাড়ায় চালাতেন। প্রতিদিনের ন্যায় ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর সকাল ৮টায় ভাড়ায় চালানোর জন্য বের হন। রাত ৯টার দিকে আসামিরা যাত্রী বেশে উপজেলার নাজিরবাজার থেকে ফরিদপুর সড়কের আবদার খালের পূর্বপাশে নিয়ে জিলু মিয়াকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর বেবী টেক্সি নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার একদিন পর ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় নিহতের বাবা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি জিআর-১৫১/২০০২ মূলে আদালতে বিচারের জন্য আসে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর থেকে হত্যা মামলাটি বিভিন্ন আদালত ঘুরে দ্রুত বিচার আদালতে ২৮৪৭/১৩ বিচারের জন্য আসে। দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ায় খুন হওয়া ব্যক্তির পরিবার বা পিতা (মামলার বাদী) কেউই এই মামলায় তদ্বির করেননি।
গতকাল রোববার চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। এ সময় নিহত জিলু মিয়ার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপরও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ন্যায় ও সুবিচার সুনিশ্চিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
পিপি অ্যাডভোকেট সারোয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল বলেন, ঘটনার রাতে চালক জিলু মিয়ার বেবীট্যাক্সিতে যাত্রী বেশে তিনজন ছিনতাইকারী উঠেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আশরাফ নামের আসামী জিলু মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে সঙ্গীয়রাসহ বেবীট্যাক্সিটি নিয়ে পালিয়ে যায়। একজন পথচারী মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নিকটস্থ বাজারে নিয়ে যান। পরে বেবীট্যাক্সির মালিক ও বাদীসহ তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার পর ওইদিন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিলু মিয়া মারা যান।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর একইভাবে অপর একটি বেবীট্যাক্সি ছিনতাইকালে আশরাফকে হাতেনাতে ধরা পড়ে এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। সে জিলু মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে বেবীট্যাক্সি ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে। তার দেখানো মতো ছিনতাইকৃত বেবীট্যাক্সি ও চাবি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ কর্তৃক তদন্ত শেষে চারজন আসামীকে চার্জশীটে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এই হত্যা মামলার ন্যায় বিচার সুনিশ্চিতে চেষ্টা করে গেছেন। মামলার সুবিচার নিশ্চিত হওয়ায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন তিনি।
আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট খিজির আহমদ এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান।