হরতালের দ্বিতীয় দিনে সিলেটে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ॥ আটক ৭
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ৪:২৩:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বিক্ষিপ্ত দু’একটি ঘটনা ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবারও অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। হরতালের শেষ দিনে সিলেট মহানগরীতে গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পিকেটাররা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা সঁটকে পড়ে।
এদিকে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শেষ দিনেও নগরজুড়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নগরীর মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও টহল অব্যাহত রাখেন। ৪৮ ঘণ্টার হরতালে সিলেটে নৈরাজ্য ও নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ও আগের দিন রোববার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) বিভিন্ন থানার অভিযানে তাদের আটক করা হয়। এর মধ্যে গতকাল সোমবার দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ১ জনকে আটক করে। আগের দিন রোববার কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ ১ জন, শাহপরাণ থানা পুলিশ ১ জন ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ৪ জনকে আটক করে। এসএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ এ তথ্য জানিয়েছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকালে নগরীতে যানবাহন চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়তে থাকে। অন্য দিনের মতোই অফিস-আদালত চলছে। চাকরিজীবীদের যথাসময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে দেখা গেছে। স্কুল-কলেজও চলছে যথারীতি। সকাল থেকে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করলেও সিলেট থেকে আন্ত:জেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন জরুরি কাজে চলাচলকারী সাধারণ মানুষেরা। তবে, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় দূরবর্তী গন্তব্যের লোকজন রেলপথকেই বেছে নিয়েছেন। বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নগরীর ছোট দোকানপাট খোলা থাকলে বন্ধ থাকে শপিংমল ও বিপণি-বিতান। স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে স্বাভাবিক দিনের মতো খুলেছে দোকানপাট। জনজীবনও অনেকটা স্বাভাবিক দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল সকালে উপশহর পয়েন্টে কয়েকটি মোটরসাইকেলে হেলমেটধারী কয়েকজন যুবক হরতালের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করে একটি ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সা ভাঙচুর করেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে এসএমপি’র কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, উপশহর পয়েন্টে দুর্বৃত্তরা পিকেটিংয়ের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা পালিয়ে যায়।
এদিকে র্যাব-৯ এর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলমান হরতাল-অবরোধে তেলবাহী লরি, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন এসকর্টের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছে র্যাব সদস্যরা। যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবিগঞ্জের রশিদপুর গ্যাসফিল্ড থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুরগামী বিভিন্ন তেলবাহী লরি কনভয়কে নিয়মিত র্যাবের এসকর্ট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, সিলেট থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে এবং নাশকতা ও সহিংসতার মাধ্যমে কেউ যেন জনমনে ভীতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে র্যাব-৯ এর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে র্যাব-৯ এর বিশেষ টহল এবং চেকপোস্ট কার্যক্রমের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে সতর্কতার সাথে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
হরতালের শেষ দিনে নগরীতে পিকেটিং ও মিছিল করেছে সিলেট মহানগর যুবদল। গতকাল দুপুরে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেনের নেতৃত্বে নগরীর দরগাগেইট এলাকায় পিকেটিং শেষে মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন-মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেন, মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটির সাবেক সিনিয়র সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বেলাল, এমদাদুল হক স্বপন, যুবদল নেতা দুলাল আহমদ, পারভেজ খান জুয়েল, চমক দে পল্লু, শাহেদ আহমদ, শাহেল রহমান, রিপন চৌধুরী, কাছা মিয়া, সিহাব খান, এম এ হাসান, মকসুদুল করিম ইমন, ছবরুল ইসলাম নেপুর, শিপলুজ্জামান, রাজু আহমেদ, সামাদ হোসেন সাজু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সরকার পতনের একদফা দাবি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে গত রোববার শুরু হয় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। হরতালের প্রথম দিনে পিকেটিংয়ের চেষ্টাকালে ছয় জনকে আটক করে পুলিশ।