তাদের ত্যাগে এই স্বাধীনতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:৪১:৫৪ অপরাহ্ন
সীতাব আলী :
পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) ন্যায্য দাবী দাওয়া দাবীয়ে রাখার জন্য বাংলার সকল নেতাদের বন্দি-অভিযান শুরু হয় মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুুল হামিদ খান ভাসানীকে ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে বন্দির মাধ্যমে। আবার ১৩ অক্টোবর, ১৯৫৮ সনের দৈনিক অবজারভার খবর দেয় ভূতপূর্ব মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, মি. আবুল মনসুর আহমদ, মি. মোহাম্মদ আব্দুল খালেক ও মি. হামিদুল হক চৌধুরীকে দূর্নীতি দমন আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এছাড়া ভূতপূর্ব এম.পি.মি. কুরবান আলী ও মি. নুরুদ্দিন আহমদ ও তিনজন উচচপদস্থ সরকারী কর্মচারীকেও দুর্নীতি দমন আইনে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই গ্রেপ্তারের ধারা চলতে থাকে সারা আইয়ুব আমল পর্যন্ত। যেখানেই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষীণ কন্ঠেও প্রতিবাদ উঠেছে, তাকে গ্রেপ্তার করে, পাকিস্তানের শত্রু আখ্যা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ‘স্বাধীন পূর্ববাংলা’ প্রতিষ্ঠার ১১ দফা কর্মসূচী প্রণয়ণ করে। মওলানা ভাসানী সমর্থক এই সংগঠনটি ‘মেনন গ্রুপ’ নামে পরিচিত ছিলো। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক আদালত কাজী জাফর আহমদ ও রাশেদ খান মেননকে সাত বৎসর এবং মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুব উল্লাহকে এক বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।
৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিব বাঙালীদের কাছে তার ৬ দফা তুলে ধরেন। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মুক্তির একমাত্র নায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে বাঙালীরা নির্বাচন করে। পূর্ব পাকিস্তানে ৩১০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসনে বিজয়ী হয়। এবং জাতীয় পরিষদের মোট ৩১৩ আসনে আওয়ামী লীগ ১৬৭ আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী ষড়যন্ত্রকারী শাসকগোষ্ঠী জনগণের রায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণের প্রক্রিয়া চালু রাখতে সক্রিয় হয়ে উঠে।
৩ জানুয়ারী (১৯৭১) শেখ মুজিবের নেতৃত্বে রেসকোর্স ময়দানের গণ-মহাসাগরের বেলাভুমিতে দাঁড়িয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা প্রত্যয়দৃঢ় কন্ঠে শপথ করেন, ‘জনগণ অনুমোদিত আমাদের কার্য্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়াসী যে কোন মহল ও অশুভ শক্তির বিরোদ্ধে আমরা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলব এবং সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে যে কোন রূপ ত্যাগ স্বীকার করতঃ আপোষহীন সংগ্রামের জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত থাকব। আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন। জয় বাংলা। জয় পাকিস্তান। (ইত্তেফাক, ৪,জানুয়ারী, ১৯৭১ইং)
৩ মার্চ পল্টনের জনসভায় পূর্ব বাংলা ছাত্রলীগ স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বিস্তারিত কর্মসূচী ঘোষণা করে। এর শেষ স্লোগানগুলি ছিল : স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হউক। স্বাধীন করো, স্বাধীন করো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। স্বাধীন বাংলার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। গ্রামে গ্রামে দুর্র্গ গড় মুক্তিবাহিনী গঠন করো। বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। ২ মার্চ ফার্মগেটে জনতার উপর গুলী বর্ষণের ফলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শান্তিপূর্ন হরতালের মাঝেও পাকিস্তানী সামরিক জান্তা নিরপরাধ, নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর গুলী ছুড়ে। ৪ঠা মার্চ টঙ্গী ও রাজশাহীতে জনতার মিছিলে গুলী বর্ষণ করলে আওয়ামী লীগ নেতারা বাঙালীদেরকে নূতন নির্দেশ দিতে থাকেন। এবং সমস্ত বাঙালী শেখ মুজিবের সে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে পালন করে।
ঘটনা বহুল মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের একটি সঠিক চিত্র ফোটে উঠে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে। কয়েক লক্ষ লোকের সমাবেশে রেসকোর্স ময়দানে বাংলার একছত্র ক্ষমতাধর নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, ‘আজ ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, এর পর যদি একটি গুলী চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে অনুরোধ রইলো, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে, রাস্তা-ঘাট যা যা আছে, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবা। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্ল¬াহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
৭ই মার্চের ভাষণে নেতা মুজিব সরকারী, আধাসরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে যে যে নিদের্শ দেন, একবাক্যে সবাই তা মেনে নেন। ৯ই মার্চ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী স্বাক্ষরিত ‘পূর্ব পাকিস্তানের আজাদী রক্ষা ও মুক্তি সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়–ন’ আহ্বান জানানো হয়। ৯ই মার্চ মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী স্বাক্ষরিত ‘পূর্ব পাকিস্তানের আজাদী রক্ষা ও মুক্তি সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়ুন’ আহ্বান জানানো হয়। ২৩ মার্চ সারা বাংলাদেশের সর্বত্র ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ও কালো পতাকা উড়ে। শুধু সেনা ছাউনি গুলোতে পাকিস্তানী পতাকা উড়ে। ২৪ মার্চ সৈয়দ পুরের যে যে বাড়িতে বাংলাদেশী পতাকা উড়ছিল, সেখানে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা গুলী বর্ষণ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের আঁধারে বাংলাদেশের সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ শুরূ করে। এই প্রতিবেদনে সেই হত্যাযজ্ঞ গুলোর কয়েকটি মাত্র আপনার সামনে তুলে ধরবো। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’র পনেরোটি খন্ডে পুরো ঘটনাবলীর কয়েকটি মাত্র, দলিল হিসেবে সহ্নিবেশিত হয়েছে। রাতের আঁধারে পাকিস্তানী হায়েনার দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ইকবাল হল, রোকেয়া হল সহ সর্বত্র ঢুকে পড়ে ছাত্রদের ধরে সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ার করে এবং যাবার বেলা কক্ষের ভেতর গ্রেনেড ছুড়ে ছুড়ে চলে যায়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পীলখানা ইত্যাদিতে বাঙালী সশস্ত্র প্রতিরোধকারীদের উপর গুলীবর্ষণ করে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যরা অসংখ্য বাঙালী হত্যা করে।
কয়েকটি নির্যাতন কাহিনী পড়–ন : চুন্নুডোম, ঢাকা পৌরসভা, রেলওয়ে সুইপার কলোনী, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা : ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ সকালে আমাদের পৌরসভার সুইপার-ইন্সপেক্টর ইদ্রিস সাহেব আমাকে লাশ উঠাবার জন্যে ডেকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিতে নিয়ে যান। সেখান থেকে আমাকে, বদলু ডোম, রঞ্জিত, লাল বাহাদুর, গণেশ ডোম ও কানাইকে একটি ট্রাকে করে প্রথমে শাখারী বাজারের প্রবেশ পথের সম্মুখে নামিয়ে দেয়। আমরা উক্ত পাঁচ জন দেখলাম ঢাকা জজ কোর্টের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের যে রাজপথ শাখারী বাজারের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তার দু’ধারে ড্রেনের পাশে যুবক-যুবতীর, নারী-পুরুষের, কিশোর-শিশুর বহু পচাঁ লাশ। বহু লাশ পচেঁ ফুলে বীভৎস হয়ে আছে। শাখারী বাজারের দু’দিকের বাড়িতে আগুন জ্বলছে, অনেক লোকের অর্ধপোড়া লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। একটি ঘরে প্রবেশ করে একজন মেয়ে, একজন শিশু সহ বারোজন যুবকের দগ্ধ লাশ উঠিয়েছি। পাঞ্জাবীরা প্রহরায় থাকাকালে সেই মানুষের অসংখ্য লাশের উপর বিহারীদের উল্লাসে ফেটে পড়ে লুট করতে দেখলাম। প্রতিটি ঘর থেকে বিহারীরা মূল্যবান সামগ্রী, দরজা, জানালা, সোনাদানা সব কিছু লুটে নিয়ে যেতে দেখলাম। আমরা ২৮ মার্চ শাখারী বাজার থেকে প্রতিবারে একশত লাশ উঠিয়ে তৃতীয় বার ট্রাক বোঝাই করে তিনশত লাশ ধলপুর ময়লা ডিপোতে ফেলেছি।
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ সকাল থেকে আমরা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশঘর ও প্রবেশ পথের দু’ধারে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, শিববাড়ি, রমনা, কালীবাড়ি, রোকেয়া হল, মুসলিম হল থেকে লাশ উঠিয়েছি। লাশ গলে যাওয়ায় লোহার কাঁটার সাথে গেঁথে লাশ ট্রাকে তুলেছি। আমাদের ইন্সপেক্টর পঞ্চম আমাদের সাথে ছিলেন। আমি এবং বদলু ডোম লাশঘর থেকে লাশের পা ধরে টেনে ট্রাকের সামনে জমা করেছি, আর গণেশ, রঞ্জিত এবং কানাই লোহার কাটা দিয়ে বিধিয়ে পচাঁ লাশ ট্রাকে তুলেছে। লাশগুলিতে ঝাঁঝরা দেখেছি, মেয়েদের কারো স্তন পাই নাই, যোনিপথ ক্ষতক্ষিত ও পেছনের মাংস কাটা দেখেছি।
প্রতিটি লাশের চোখ ও হাত পিছন দিকে বাঁধা ছিল। সাত মসজিদের সকল লাশ তুলে আমরা ধলপুর ময়লা ডিপোতে ফেলেছি। ধলপুর যাওয়ার পথে ঢাকা ষ্টেডিয়ামের মসজিদের সম্মুখ থেকে এক বৃদ্ধ ফকিরের সদ্য গুলিবিদ্ধ লাশ তুলেছি, দেখলার লাশের পাশেই ভিক্ষার ঝুলি, টিনের ডিবা ও লাঠি পড়ে আছে। রোকেয়া হল থেকে একটি অর্ধদগ্ধ যুবতীর লাশ তুলেছি। পরের দিন ৩১ মার্চ বাসাবো খাল থেকে তিনটি পচাঁ লাশ তুলেছি। (টিপ সহি, চুন্নুডোম, ৭-৪-১৯৭৪ইং, পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে চুন্নুডোমের উল্লেখিত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই ঘটনা গুলো স্বীকার করে। -সীতাব আলী)
পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মান নাৎসী বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে ছিল বরিশাল জেলার পিরোজ পুর থানার (বর্তমানে জেলা) বাঘমারা কদমতলীর অষ্টাদশী ভাগীরথী। সুপরিকল্পিত ভাবে মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় ৪০ জন হানাদার পাকিস্তানীকে খতম করে প্রতিশোধ নিয়ে স্বাধীনতাকে তরান্বিত করে ছিল সে। কিন্তু এ জন্য তাকে দিতে হয়ে ছিল চরম মূল্য। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে তৎকালিন প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক আজাদ লেখে : ‘ভাগীরথী কৌশলের আশ্রয় নিল এবার। এখন আর অবাধ্য মেয়ে নয়, দস্তুরমত পাকিস্তানীদের খুশী করতে শুরু করল, ওদের আস্থা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলো। বেশী দিন লাগলোনা, অল্প ক‘দিনেই নারী-লোলুপ ইয়াহিয়া বাহিনী ওর প্রতি দারুণ আকর্ষণ অনুভব করল। আর এই সুযোগে ভাগীরথী ওদের কাছ থেকে জেনে নিতে শুরু করলো পাক বাহিনীর সব গোপন তথ্য।
এক পর্যায়ে বিশ্বাসভাজন ভাগীরথীকে ওরা নিজের ঘরের যেতে দিল। আর কোন বাঁধা নেই। ভাগীরথী এখন নিয়মিত সামরিক ক্যাম্পে যায় আবার ফিরে আসে নিজ গ্রামে। এরই মধ্যে চতুুরা ভাগীরথী তাঁর মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেও এগিয়ে গেল অনেক খানি। গোপনে মুক্তিবাহিনীর সাথে গড়ে তুলল ঘনিষ্ট যোগাযোগ। এরপরই এল আসল সুযোগ। জুন মাসের একদিন ভাগীরথী খান সেনাদের নিমšত্রণ করলো তার নিজ গ্রামে। এদিকে মুক্তি বাহিনীকেও তৈরী রাখা হলো যথারীতি। ৪৫ জন খান সেনা সেদিন হাসতে হাসতে বাগমারা কদমতলা এসেছিল, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ৪/৫ জন ক্যাম্পে ফিরতে পেরেছে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বাকিরা ভাগীরথীর গ্রামেই শিয়াল, কুকুর ও শকুনের খোরাক হয়েছে। এরপর আর ভাগীরথী ওদের ক্যাম্পে যায়নি। ওরাও বুঝেছে, এটা তারই কীর্তি। হানাদাররা তাই হুকুম দিল জীবিত অথবা মৃত ভাগীরথীকে যে ধরিয়ে দিতে পরবে তাকে নগদ এক হাজার টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। বাংলার ভাগীরথী জানতোনা ওর জন্যও দুঃসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। একদিন রাজাকার নামের বাংলাদেশী জল্লাদদের হাতে ধরা পড়লো ভাগীরথী। তাকে নিয়ে এল হানাদার বাহিনীর পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে।
পাকিস্তানী খান সেনারা এবার ভাগীরথীর উপর তাদের হিংস্রতার পরীক্ষার আয়োজন করলো। এক হাটবারে তাকে শহরের রাস্তায় এনে দাঁড় করানো হলো জনবহুল চৌমাথায়। সেখানে প্রকাশ্যে তার অঙ্গাবরণ খুলে ফেল্ল কয়েকজন পাকিসেনা, তারপর দু‘গাছি দড়ি ওর দু‘পায়ে বেঁধে একটি জীপে বেঁধে জ্যান্ত শহরের রাস্তায় টেনে বেড়াল ওরা মহা উৎসবে। ঘন্টা খানেক রাজপথ পরিক্রমার পর আবার যখন ফিরে এল সেই চৌমাথায়, তখনও ওর দেহে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। এবার তারা দু‘টি জীপের সাথে তার দু‘টি পা বেঁধে নিল এবং জীপ দু‘টিকে চালিয়ে দিল বিপরীত দিকে। ভাগীরথী দু‘ভাগ হয়ে গেল। সেই দু‘ভাগে দু‘জীপে আবার শহর পরিক্রমা শেষ করে জল্লাদ পাকিস্তানী সেনারা আবার ফিরে এল সেই চৌমাথায় এবং এখানেই ফেলে রেখে গেল ওর বিকৃত মাংসগুলো। একদিন দু‘দিন করে সে মাংসগুলো ঐ রাস্তার মাটির সাথেই একাকার হয়ে গেল এক সময়। বাংলামায়ের ভাগীরথী এমন ভাবে আবার মিশে গেল বাংলার ধুলিকণার সাথে।
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা।