সিলেটে প্রকাশ্যে চলছে অবৈধ সিগারেটের ব্যবসা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৬:৪৩ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ বিদেশি সিগারেট। উচ্চ শুল্কযুক্ত এসব সিগারেট শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে ঢুকছে দেশের বাজারে। সক্রিয় নজরদারি ও তৎপরতার কারণে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে মাঝে মাঝে অবৈধ সিগারেটের চালান ধরা পড়ে। তবে মাঠ পর্যায়ে এসব অবৈধ সিগারেটের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা চোখে পড়ে না।
একসময় নির্দিষ্ট কিছু দোকানে বিদেশি সিগারেট বিক্রি হলেও এখন সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে অবৈধ বিদেশি সিগারেট। চোরাকারবারীরা বিভিন্ন কৌশলে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসছে এসব সিগারেট। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে।
চোরাই সিগারেটের ওপর বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এক বাজার জরিপে দেখা গেছে, বিদেশি সিগারেট আমদানিতে ৫৯৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ চোরাই বিদেশি সিগারেট বিক্রি হয়, এসব সিগারেট থেকে আমদানি শুল্ক আদায় করতে পারলে বছরে আরও প্রায় ১৩০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হতো।
জানা যায়, সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে বাংলায় সতর্কীকরণ লেখা ও ছবি ছাড়া সকল সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ। এছাড়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে রাজস্ব স্ট্যাম্প থাকারও। কিন্তু চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা সিগারেটের ক্ষেত্রে এসব নিয়মের কোনো বালাই নেই। কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছে এ অনিয়ম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েও এসব সিগারেট দেশে আসছে। বিমানবন্দর ছাড়াও স্থল সীমান্ত ও সমুদ্রপথেও অবৈধ সিগারেট ঢুকছে দেশের বাজারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে চোরাকারবারিরা দুবাই থেকে সরাসরি না হয়ে ভারতের মুম্বাই হয়ে দেশে প্রবেশ করছে বলে জানা যায়। ফ্ল্যাট-বাসা ভাড়া নিয়ে মজুদ করা হয় এসব অবৈধ সিগারেট। পরে বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তা মাঝারি ও ক্ষুদ্র দোকানীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
সিলেটের খুচরা সিগারেট বিক্রেতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব সহজেই তারা এসব বিদেশি সিগারেট সংগ্রহ করতে পারেন। এজন্য কোথাও যেতে হয় না। সাইকেলে করে বিক্রয় কর্মীরা এসে সিগারেট দিয়ে যায়। আবার ফোন করলেও সিগারেট পৌঁছে দেয়। বিদেশি সিগারেট বিক্রি করলে তাদের লাভ অনেক বেশি থাকে। তাই দিন দিন এসব সিগারেটের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তারা।
তবে বিক্রয় প্রতিনিধিরা কোথা থেকে এসব সিগারেট সংগ্রহ করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা নেই বিক্রেতাদের।
সিলেটের খুচরা ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, লাগেজ পার্টির মাধ্যমেই মূলত অবৈধভাবে এসব সিগারেট দেশে আসছে। তবে বিদেশি সিগারেট বিক্রি করা যে অবৈধ তা স্বীকার করেন তিনি। এসব সিগারেট বিক্রি করতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগে খুব বেশি বিক্রি হতো, কিন্তু মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে এসব সিগারেট লুকিয়ে বিক্রি করতেন। তবে গত কয়েক বছর ধরে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বর্তমানে প্রকাশ্যেই প্রর্দশন করে বিক্রি করতে পারছেন।
সিগারেট পণ্যের চোরাচালান বন্ধ ও তামাক পণ্য বিক্রিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তামাক পণ্য বিক্রিতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকলেও এইসব বিদেশী অবৈধ সিগারেটের বিজ্ঞাপন ও বিপণন দেদারছে চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এগুলো অতি শীঘ্রই বন্ধ করার দাবি জানান তারা।