সিলেটের ছয় আসনে ২৭ লাখ ভোটারের হাতে ৩৩ প্রার্থীর ভাগ্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১:০৪:২৪ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক : সিলেট জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে ৩৩ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ২৭ লাখ ভোটার। ভোটারদের নীরব রায়ে নির্ধারণ হবে প্রার্থীদের হার-জিত। কাগজে-কলমে ৩৫ জন প্রার্থীর নাম থাকলেও ভোটের মাঠে আছেন ৩৩ জন। ঘোষণা দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাব্বির আহমদ। আর ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী মইনুল ইসলাম আশরাফী নির্বাচন বর্জন না করলেও আরেক প্রার্থীকে সমর্থন করে গুটিয়ে নিয়েছেন।
বিএনপি বিহীন নির্বাচন ঘিরে উৎসবের পাশাপাশি উৎকণ্ঠাও রয়েছে। এদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা আশ্বস্থ করেছেন, নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা বা কারচুপির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ছয়টি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ৫৮ জন; জমা দেন ৪৭ জন। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৩ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে আরও দুইজন আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান। সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, জেলায় এবার মোট ভোটার ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৩৩১ জন। পুরুষ ১৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৯৫, নারী ১৩ লাখ ২২ হাজার ৯২৬, তৃতীয় লিঙ্গের ১০ জন ভোটার রয়েছেন।
রাত ৩টায় প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ব্যালট পেপার হস্তান্তর
শনিবার রাত ৩টায় সিলেট জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে ব্যালট পেপার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। তিনি সাংবাকিদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
ফাঁকা মাঠে গোল দেবেন মোমেন
এবারের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এই আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন মোমেন। পরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এখানে মোমেনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো তেমন শক্তিশালী প্রার্থী নেই বললে চলে। দলের তিনবারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন (সিরাজ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এরপর মোমেন-মিসবাহের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। তবে ‘হঠাৎ’ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে আলোচনা থামিয়ে দেন মিসবাহ নিজেই। এখন মোমেন অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দেবেন বলে মনে করছেন ভোটাররা।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর)
এ আসনে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেক ভোটার মনে করছেন। তবে নৌকা জেতাতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী (লাঙ্গল) ও পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ)
এ আসনে মূল প্রতদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার মাঝি হাবিবুর রহমান হাবিব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএমএর মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালের মধ্যে। তবে বেশ আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইহতেশামুল—এমনটা জানালেন স্থানীয় ভোটাররা। দুলাল আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যের দায়িত্বে আছেন। দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ডা. দুলাল। তিনি ট্রাক্টর প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ)
সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। পর্যটন সমৃদ্ধ এ আসনের ছয়বারের সংসদ সদস্য হলেন বর্তমান সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী। জয়রথ কেবল ঘোষণার বাকি। সুযোগ থাকার পরও তার বিপরীতে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়নি। ভোটে থাকা অন্য প্রার্থীরাও তেমন শক্ত অবস্থানে নেই বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ)
শেষ মুহূর্তে এসে নৌকা তীরে ভেড়াতে নির্ঘুম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী। তবে এ আসনে নৌকা ডুবাতে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ ‘তলে তলে’ স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর মহাসচিব মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর (কেটলি) পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া পদধারী কিছু নেতা স্বতন্ত্র আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহমদ আল কবিরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন নৌকার প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশেদ আলম চৌধুরী রিপন, আমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসিন আহমদ মিন্টুসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন নৌকার বিরুদ্ধে।