পালিয়ে গেছেন মূল হোতা সাদেক
৬ লাখ টাকাসহ ওসমানী হাসপাতালের দুই ‘ব্রাদার’ গোয়েন্দা সংস্থার হেফাজতে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১:০৭:৪৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৬ লাখ টাকাসহ সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই ব্রাদারকে আটক করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তাদের আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া।
অন্যদিকে, এ ঘটনার মূল অভিযুক্ত নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী ছাদেক অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যান। আটককৃতরা হলেন- হাসপাতালের সিনিয়র নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন দেব। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৬ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। ইসরাইল আলী ছাদেক এর আগে ২০১৯ সালে র্যাবের হাতে আটক হয়েছিল।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ওসমানী হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী ছাদেকের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে একটি সিন্ডিকেট হাসপাতালে বদলি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে। এমন একটি সুনির্দিষ্ট খবরে মঙ্গলবার অভিযান চালায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। অত্যন্ত কৌশলি ইসরাইল আলী ছাদেক নিজে না গিয়ে তার দুই সহযোগী আমিনুল ইসলাম ও সুমন দেবকে দিয়ে ঘুষ লেনদেন করায়। এরপর তারা টাকাসহ হাতেনাতে ধরা পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুষ দেওয়া ভুক্তভোগী সিনিয়র নার্স বলেন, তার এরিয়ার (ডিউটির) বিলের ৩৪ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। সেই টাকাগুলো উত্তোলন করতে চাইলে তা আটকে দেয় ইসরাইল আলী ছাদেক, আমিনুল ও সুমন দেবসহ ৪ জন। পরে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করলে দেন-দরবার করে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় তারা রাজি হয়। মঙ্গলবার ৫০ হাজার কম দিয়ে ৬ লাখ টাকা মেডিকেল কলেজ অভ্যন্তরের ব্যাংক থেকে তুলে দিতে যান। তখন ছাদেককে ফোনে বলি, তার হাতে টাকা দেব। কিন্তু সে না এসে আমিনুলকে পাঠায়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের অবজারভেশন কক্ষের পাশে স্টোর রুমে টাকা হস্তান্তর কালে দুইজন লোক এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং আমিনুল ও সুমন দেবকে আটক করে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অঘোষিত ‘সম্রাট’ স্টাফ নার্স ইসরাইল আলী ছাদেক। তার কাছে অনেকটা জিম্মি সাধারণ রোগীরা। শুধু রোগীই নয়, হাসপাতালের অনেক স্টাফও তার কাছে জিম্মি। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের হাড়ের অপারেশনে ব্যবহৃত ধাতু দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের পাত, তার, স্ক্রু, বল ইত্যাদি অবৈধ সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নার্সদের বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার তার বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালের গত ৩ অক্টোবর নগরীর আলমপুর এলাকা থেকে ইসরাইল আলী সাদেক ও নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার বাসিন্দা মৃত দৌলত আহমদের ছেলে ওমর ফারুককে আটক করেছিল র্যাব। এসময় তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫টা করে মোট ১০টি পেথিডিন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামিমা প্রথমে তাকে জানান, সাদা পোশাকের একদল লোক সিনিয়র নার্স আমিনুলকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপরই ঐ গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টরা তাকে ফোন করে জানিয়েছেন, অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ৬ লাখ টাকাসহ তারা আমিনুল ও সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছেন। তিনি আরও জানান, একজন নার্সের এরিয়ার বিল সংক্রান্ত লেনদেনের সূত্র ধরে এদের আটক করা হয়। তবে আমিনুলকে আটক করা হলেও ওই গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য ছিলো, ওসমানীর নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি আলোচিত সমালোচিত ইসরাইল আলী সাদেক-সেখানে লেনদেন করবেন। কিন্তু তিনি না গিয়ে সেখানে অন্যদের পাঠিয়েছেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুব আরও জানান, হাসপাতালটিকে জিম্মি করতে বিভিন্ন দালাল চক্র সক্রিয়-এটা সবাই জানেন। তবে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ ঘটনায় কতজন জড়িত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালককে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এখনো এই ঘটনায় মামলা হয়নি বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক।