সিলেটের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর জীবনী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৪:৫৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন মন্ত্রিসভায় সিলেট বিভাগের তিনজন স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটগুলোর সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহীদ এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা। বিশ্বনাথসহ অন্যান্য স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল হয়েছে।
ডা. সামন্ত লাল সেন
সামন্ত লাল সেন ১৯৪৯ সালের ২৪ নভেম্বর হবিগঞ্জের নাগুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জিতেন্দ্র লাল সেন। সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮০ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে জার্মানি ও ইংল্যান্ডে সার্জারিতে আরো উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
এমবিবিএস পাস করার পর ১৯৭৫ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে কর্মজীবন শুরু করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। পরে ঢাকায় বদলি হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। ঢাকা মেডিকেলে ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম বার্ন বিভাগ চালু হয়। এই বিভাগ চালু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ২০০৩ সালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জন্য স্বতন্ত্র একটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি এ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। পরে সরকার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে এই ইউনিটটিকে স্বতন্ত্র একটি ইন্সটিটিউটে রুপান্তর করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নামে ২০১৯ সালের ৪ জুলাই এখান থেকে চিকিৎসাসেবা প্রদান শুরু হয়। শুরু থেকেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে ২০১৮ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের আওয়ামী লীগ সরকারের টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেন।
উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ
মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর মন্ত্রী হলেন। তাঁর মন্ত্রী হওয়ার খবরে মৌলভীবাজার জেলাসহ নির্বাচনী এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা।
উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ ১৯৭৩ সালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার গণ মহাবিদ্যালয়ে যোগদান করে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি প্যানেল স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তিনি ২ লাখ ১২ হাজার ৪৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ এবং ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদে হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও জাতীয় সংসদে তিনি অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে পালন করছেন।
শফিকুর রহমান চৌধুরী
সিলেটের বিশ্বনাথবাসী প্রায় ৪৫ বছর পর আবারো পেলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী পদ। সেই প্রতিমন্ত্রী হলেন সিলেট-২ বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর আসনের নবনির্বাচিত এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
বুধবার সন্ধ্যায় সর্বত্র এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বনাথবাসীর মধ্যে দেখা দেয় আনন্দের বন্যা। নেতাকর্মীরা মেতে উঠেন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে। পৌর শহরে মিষ্টি বিতরণ করেছেন দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ।
দীর্ঘদিন পর বিশ্বনাথবাসী শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রী পেয়ে উন্নয়ন নিয়ে নতুন করে আশার বুক বাঁধছেন।
এর আগে ৪৫ বছর পূর্বে ১৯৭৮ সালে একবার যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পেয়েছিলেন বিশ্বনাথবাসী। তিনি হলেন মরমী কবি দেওয়ান হাসন রাজা পরিবারের সদস্য দেওয়ান তৈমুর রাজা চৌধুরী। তারপর প্রায় ৪৫টি বছর বিশ্বনাথবাসী মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দেখা পাননি। তৃণমূলের কর্মী থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হলেন, শফিকুর রহমান চৌধুরী।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর মধ্যদিয়ে দশ বছরের অপেক্ষার অবসান হয় তার। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তিনি ৭৮ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শফিকুর রহমান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটস কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের সেক্রেটারি, বেথনাল গ্রীন সিটি চ্যালেঞ্জের ডিরেক্টর ও বিভিন্ন সাব কমিটির কো-চেয়ারম্যান, বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি, প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব, লন্ডনে বৈশাখী মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও অন্যতম উদ্যোক্তা ছাড়াও বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শফিকুর রহমান চৌধুরী।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে বিলেতের মায়া ত্যাগ করে সিলেটের রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হন ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন তিনি।
স্থানীয় রাজনীতিতে এই সাফল্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করে সরাসরি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করেন।
জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগির কারণে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি শফিক চৌধুরী। এই দুই নির্বাচনে আসনটি জোটের অনুকূলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংসদ সদস্য না থাকলেও দীর্ঘ ১০ বছর এলাকাছাড়া হননি তিনি। এলাকার জনগণের সুখে-দুঃখে, দুর্যোগকালে বন্ধুর মতো পাশে থেকেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থাভাজন হয়ে কাজ করে গেছেন।