চা উৎপাদন বন্ধ
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোয় চা গাছ ছাঁটাই কার্যক্রম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : শ্রীমঙ্গলের চা শিল্পাঞ্চলের চা বাগানগুলোয় শুরু হয়েছে চা-গাছ ছাঁটাই কার্যক্রম। ফলে বন্ধ রয়েছে চা উৎপাদন। মূলত: চা গাছকে দীর্ঘস্থায়ী ও সতেজ রাখতে চা গাছের ছাঁটাই করা হয়। চা বাগানগুলোতে চায়ের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক পদ্ধতির প্রুনিং বা ছাঁটাইর কাজ করা হয়। গাছের বয়স, মাটির উর্বরতাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রেখে প্রতিটি বাগানে প্রুনিং বা ছাঁটাইর কাজ করা হয়। এরপর চা গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে সার প্রয়োগ করা হয়। পরে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি পেয়ে গাছ সতেজ হয়ে কচি পাতায় ভরে ওঠে। নিয়ম অনুযায়ী, লম্বায় আট ইঞ্চি পরিমাণের পাতা জন্মালে মার্চ বা এপ্রিলে পাতা তোলা শুরু হয়।
গতকাল শুক্রবার দিনভর জেলার বিভিন্ন চা বাগানগুলো সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়ে। ফলে চা বাগানে সেই সবুজের সমারোহ এখন আর নেই। এসময় বাগানের সেকশনজুড়ে চা গাছগুলোর মাথা কেটে ছেঁটে ফেলা হয়। প্রাকৃতিক কারণে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে চা বাগানের উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে।
এ ব্যাপারে টি-প্ল্যান্টার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, চা বাগানের ভাষায় প্রুনিংয়ের আরেকটি অর্থ কলম করা। এ ধরনের প্রুনিংয়ের নাম ব্রিদার। এই পদ্ধতিটি হচ্ছে মাটি থেকে যে গাছগুলো ২৪ ইঞ্চি ছাঁটাই করা হয় সে গাছগুলোতে অতিরিক্ত একটি ডাল রাখা হয়। এর উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রিদারের আরেকটি অর্থ হচ্ছে শ্বাস নেওয়া। অর্থাৎ, এই ডালের ফলে চা গাছগুলো সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যালোক থেকে তার প্রয়োজনীয় খাদ্য-পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
চা বাগান সংশ্লিষ্টরা জানান-আগামী ২-৩ মাস সেকশনব্যাপী চা বাগানের গাছগুলোর মাথা কাটা দেখা যাবে। কয়েক মাস পর বৃষ্টি হলে আবার ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য। দেখা মিলবে অবারিত সবুজের সমারোহ। জেরিন চা বাগানের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সেলিম রেজা চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরই নিয়মানুযায়ী ডিসেম্বরে চা উৎপাদন মৌসুম শেষে লাইট প্রুনিং বা চা গাছের মাথা ছাটাই শুরু হয় এবং মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ‘ডিপ স্কিপ’ করে দিতে হয়। তখন চা বাগানের সেই সবুজের সমারোহ আর থাকে না।
গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন বাগানে প্রুনিং শুরু হয়েছে। কোনো বাগানে আবার জানুয়ারিতেও শুরু হবে, চলবে দুই তিন মাস। আর চা গাছে প্রুনিং মানেই হলো নতুন জীবন দান। চায়ের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রুনিং করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। জেলার চা শিল্পাঞ্চলে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ৯১টি চা বাগানে এ প্রুনিংয়ের কাজ চলবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১০২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ৯৫ মিলিয়ন কেজির বেশি চা উৎপাদন ছাড়িয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় চলতি মৌসুমের চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে দেশে চা উৎপাদনের একটি নতুন রেকর্ড হিসেবে পরিগণিত হবে।