আজমিরীগঞ্জে মাধ্যমিকে দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তিতে অনিশ্চয়তা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ৫:১১:০৬ অপরাহ্ন
মো. আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে : প্রবাসী অধ্যুষিত হলেও সিলেট এখনো শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থায় আরেকটি দু:সংবাদ হলো হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষার করুণ চিত্র। এ উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার ২ হাজার ২৪০জন শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও ৬৬০ জনের বেশী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবক ও সচেতন মহল।
অবশ্য এর পেছনে শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়হীনতাকেও দায়ী করা হচ্ছে। অপরদিকে, এখনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়নি।
জানা যায়, এ বছর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৬৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ২৪০জন শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু উপজেলায় এমপিওভুক্ত ও বে-সরকারি ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এগুলোতে শাখা রয়েছে ১২টি। প্রতি শাখায় ৫৫ জনের বেশী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। এ হিসেবে ৬৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১০ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করেছে। মোট আবেদনের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কিন্তু নতুন কারিকুলামে সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী, মাত্র ৬৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। ফলে বাকী দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মাধ্যমিকে ভর্তি অনিশ্চয়তায় পড়েছে। শিক্ষা বিভাগের ভাষ্য, বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি বলছে, সমস্যা নিরসনে শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্র জানায়, উপজেলাজুড়ে শিক্ষক সংকটও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সেকশন বাড়ানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগে আপাতত সুখবর মিলছেনা।
কোন কোন বিদ্যালয়ে ২৫টি পদের বিপরীতে মাত্র ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাপক অর্থায়ন প্রয়োজন। যা কোনভাবেই বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো সম্ভব নয়। এতে করে সমস্যা নিরসন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি করা যায়নি। ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন স্কুলে আসছে, আর ফিরে যাচ্ছে।
হোসনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমি মিয়াধন মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলাম, কিন্তু ভর্তির সুযোগ পাইনি। আমার স্বপ্ন ছিল- আমি একদিন শিক্ষক হব। আমার সেই স্বপ্ন এখানে শেষ।
অভিভাবক দীপা আক্তার জানান, আমার মেয়েটির লেখাপড়া এখানেই শেষ হয়ে গেল। কোন স্কুলে ভর্তির সুযোগ হলো না। সব স্কুলে কোটা পূরণ হয়ে গেছে।
এবিসি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ইয়াছমিন বেগম জানান, আমার বিদ্যালয়ে দু’টি সেকশনে ১৮০টি আবেদন পড়েছে। বিপরীতে আমরা ১১০ জনকে ভর্তির সুযোগ দিয়েছি। লটারী হয়েছে তবে ভর্তি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তিনি আরো জানান, এই মূহুুর্তে আমাদের বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু র্বতমানে আছেন খন্ডকালীন ২ জনসহ মাত্র ১১ জন শিক্ষক।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করেছি। শিক্ষার্থী যথাসময়ে ভর্তি হতে না পারলে ঝরে পড়ার শঙ্কা থাকে।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল ভৌমিক জানান, ‘ইতিমধ্যে শিক্ষা বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তাছাড়া স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে সহযোগিতা চেয়েছি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দ্রুত খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে। যাতে করে কোন শিক্ষার্থী ঝরে না পড়ে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ জানান, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেকশন বৃিদ্ধ, শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে তারা উদ্যোগ নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করবে।’