হাসপাতালে নেই গাইনি চিকিৎসক, সিজার কার্যক্রম বন্ধ ৬ বছর ধরে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ৪:৪০:৩৬ অপরাহ্ন
মো. আবু হেনা, আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে : আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলাবাসাী। দীর্ঘদিন ধরে গাইনি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় জরুরি প্রসূতিসেবা পাচ্ছন না হাওরবাসী। চিকিৎসক ছাড়াই চলছে গাইনি বিভাগের কার্যক্রম। চিকিৎসক সংকটে ছয় বছর ধরে সিজার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রসূতি মায়েদের। মাসে কিছু নরমাল ডেলিভারি ছাড়া সিজারিয়ানে কোন অর্জন নেই এই হাসপাতালের। ডাক্তার না থাকার কারণে মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গর্ভবতী নারীদের ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয় । অনেক সময় রাস্তায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০১৫ সালের শেষের দিকে এক জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি চিকিৎসক হিসাবে যোগদান করেন। তারপর তিনি অনিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকলেও গর্ভবতী প্রসূতি মায়েরা কিছুটা হলেও সেবা পেতেন।
২০১৮ সালের শুরুতেই তিনি বদলি হয়ে চলে গেলে আজ পর্যন্ত কোনো গাইনি চিকিৎসকের পদায়ন করা হয়নি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সিজার করানো হয় ওই হাসপাতালে। তারপর চিকিৎসক ও সরঞ্জাম সংকটে আর কোনো সিজার হয়নি। কিন্তু হাসপাতালে সিজার করানো সকল সরঞ্জাম প্রস্তুত থাকলেও ডাক্তার সংকটের কারণে এ কার্যক্রমটি চালু করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, এ উপজেলায় পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি। তাদের সরকারি চিকিৎসাসেবার একমাত্র মাধ্যম ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীতি করা হলেও এখনও কার্যক্রম চালু করা হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন ১১ জন চিকিৎসক । তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিওলজি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট দন্ত পদে কোন চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন ধরে।
আরিফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, হাসপাতালে কয়েকজন সিনিয়র নার্স থাকায় কিছু প্রসূতি মায়েরা সেবা পেলেও সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই তারা জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তখন নিরুপায় হয়ে জেলা সদর হাসপাতাল অথবা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সেখানে তাদেরকে মোটা অংকের টাকা ব্যয় বহন করতে হয়। এছাড়া অনেক সময় তাদেরকে নানান ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
সমর আলী নামের অপর ব্যক্তি বলেন, কিছুদিন পূর্বে তার পুত্রবধূকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে সিজার করানো হয়। সেখানে তার নাতির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি সিজারের কিছু সরঞ্জামও সংকট রয়েছে। তিনি আরো জানান, চিকিৎসক ও সরঞ্জামের চাহিদা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। খুব দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।