কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ
দিরাইয়ে ভূমিহীন বিতর্কিতদের দিয়ে পিআইসি গঠন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১:১২:৩৬ অপরাহ্ন
উবাইদুল হক, দিরাই থেকে : সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বেড়ি বাঁধের পাশে থাকা প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে পিআইসি গঠনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ করতে পিআইসি কমিটি বানিয়ে লুটপাটের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। মোটা অংকের বাণিজ্যের মাধ্যমে এসব হচ্ছে। খোদ পাউবোর উপপ্রকৌশলী আব্দুল মোনায়েম অর্থের বিনিময়ে পিআইসি গঠনে কাজ করেছেন। যে কারণে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ যথা সময়ে এবং সঠিকভাবে না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধের পাশে থাকা জমির মালিক ও প্রকৃত কৃষকদের নিয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তাদেরকে বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের হিড়িক চলছে। উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের আলিপুর এলাকার ৭০,৭১ এবং ৭৫ নং পিআইসি কমিটির বিরুদ্ধে গত শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এলাকার কয়েকজন লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় কৃষকদের বাদ দিয়ে বাঁধ এলাকার ৭ কিলোমিটার দূরের কৃষক নন ও এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি বা পিআইসি গঠন করা হয়। এতে করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বলনপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা কৃষক শ্যামল তালুকদার জানান,
৭৩ নম্বর পিআইসির সভাপতি হচ্ছেন কবির আহমেদ। তার বাসস্থান প্রকল্প এলাকা হতে ৭ কিলোমিটার দূরে সাদিরপুর গ্রামে। বাঁধের আশে-পাশের কোনো হাওরে তার জমি নেই। কমিটিতে সদস্য সচিব ও সদস্য নীতিমালা বহির্ভূতভাবে এলাকার বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এদের প্রতি হাওরের কৃষকের কোনো আস্থা নেই। তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে আসবে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তিনি জানান, এই পিআইসির মাটি আশে পাশের কোন সরকারি খাস খতিয়ান থেকে আনার সুযোগ নেই। তার নিজস্ব ক্রয়কৃত জমি থেকে পিআইসিকে মাটি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এলাকার স্বার্থে ওই পিআইসি বাতিল করে নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের পাশে জমি আছে এমন কৃষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের দাবি তার।
দিরাই পাউবো সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি হাওরে মোট ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। বাঁধের অভ্যন্তরে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ১১০টি পিআইসি এবার এই বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ করার নীতিমালা থাকলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত শতকরা ২২ ভাগ কাজ হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাঁধ ঘুরে ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক বাঁধে অনিয়ম ও অজুহাত দেখিয়ে পিআইসি গঠন থেকে কাজ শুরু পর্যন্ত বিলম্ব করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় একই ব্যক্তিকে নামে বেনামে একাধিক পিআইসি দেয়া হয়েছে। আর বিনিময়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে নগদ অর্থ। এমনকি কিছু কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় খোদ পাউবোর কর্মকর্তা ভাগবাটোয়ারা করে পিআইসি দিয়েছেন। যেমন স্থানীয়রা দুই ভাগ পেলেও কর্মকর্তা আরেক ভাগ পাবেন। উর্ধনতন প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির ফলে পাউবোর কর্মকর্তারা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ের ৪৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো অনেক বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। আবার যে গুলোর কাজ শুরু হয়েছে সেগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী মাটি ফেলা হচ্ছে না। সময়মতো বাঁধের কাজ শেষ না হলে আগাম বন্যায় ফসলের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। এবার কাজের গতি তাঁদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বলেও তারা জানান।
যোগাযোগ করা হলে দিরাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ.টিএম মোনায়েম হোসেন সিলেটের ডাককে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকলে বিষয়টি দেখা হবে। ভাগবাটোয়ারা করে পিআইসি দেয়ার বিষয়টাও সত্য নয়।সময় মতো পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান খোন্দকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।