অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমনের আশ্বাস
চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা এবার দ্বারস্থ বিভাগীয় কমিশনারের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৬:০০:৪০ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী :
সিলেটে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিচ্ছে সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। এর সাথে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজস। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসনের পর এবার দ্বারস্থ হয়েছেন বিভাগীয় প্রশাসনের। এ বিষয়ে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে তারা বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে, চাঁদাবাজদের কঠোর হস্তে দমনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবু আহমদ ছিদ্দিকী এনডিসি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে জানান, ব্যবসায়ীরা লিখিতভাবে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানিয়েছেন। বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। সভায় এসএমপির কমিশনার সাফ জানিয়েছেন, চাঁদাবাজদের ছাড় নেই। পুলিশ ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের ক্ষতি করতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন কঠোর হস্তে চাঁদাবাজদের দমন করবে।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান বলেন, পুলিশের যে কেউ এমন অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। চাঁদাবাজির ঘটনায় ইতোমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নগরজুড়ে পুলিশ তৎপর হয়ে মাঠে আছে। চাঁদাবাজদের কোনো ছাড় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সে রয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা পুলিশ কমিশনারের নিকট চাঁদা নেয়ার দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ দিয়েছি। যেখানে চাঁদাবাজ ও পুলিশ এক সাথে চাঁদা নেয়ার দৃশ্য আছে। ব্যবসায়ীদের রক্ষার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। কমিশনার গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে সভা হয়েছে বলে শুনেছি।
কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মো. জুনেদ আহমদ জানিয়েছেন, নগরের সোবহানিঘাটে সবজি ভর্তি পিক-আপের চালকের উপর হামলার ঘটনায় শান্ত মহালদার (২৪) ও রাজা আহমদ (২৬) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে শান্ত মহালদারকে রিকাবীবাজার ও রাজা আহমদকে গতকাল ভোররাতে নগরের বন্দরবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত শান্ত মহালদার সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার মামুদনগরের সমির মহালদার ও রাজা আহমদ নগরের ছড়ারপাড়ের (সুগন্ধা-৭১,ব্লক-বি) আলা উদ্দিনের পুত্র। শান্ত মহালদার বর্তমানে নগরের পাঠানটুলার পল্লবী (বাসা নং-১১, ব্লক ডি) এলাকায় বসবাস করছিল। তাদেরকে গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। চালকের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্মারকলিপিতে যা বলা হয়েছে :
ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির আওতাভুক্ত সিলেটের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাট, লালদীঘির পাড়, আমজাদ আলী রোড, মহাজনপট্টি, চাউল বাজার ও ডাক বাংলা রোডে কতিপয় সন্ত্রাসী কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশে চাঁদাবাজি হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, সিলেটের বৃহত্তম ও প্রাচীন এই পাইকারি বাজার থেকে সমগ্র সিলেট বিভাগে ট্রাক, পিক-আপ ও অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ হয়ে থাকে। যানবাহন ও ব্যবসায়ীদের নিকট হতে-এ রকম চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারলে তা পণ্য সরবরাহ, দ্রব্যমূল্য ও বাজার ব্যবস্থার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, বিগত কিছুদিন ধরে কালিঘাট বৃহত্তর বাণিজ্যিক এলাকায় সকালে ও রাতে কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বাজারে প্রবেশ করে ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে মালামাল লোড-আনলোডে বাধা প্রদান করে চাঁদা দাবি করে। বাজারে আগত ব্যবসায়ীগণ মালামাল ক্রয় করে যানবাহনে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ও বাজারে মালামাল প্রবেশের সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি আটকে মালামাল লুটসহ চাঁদাবাজি করে আসছে। এই অবস্থায় বৃহত্তর কালিঘাটের ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের এই কার্যকলাপের ফলে বৃহত্তর কালিঘাটের ব্যবসা বাণিজ্যে বিঘিœত হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষুণœ হচ্ছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এর প্রভাবও পড়ছে। সন্ত্রাসীদের এ সকল কার্যকলাপ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকার ফলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় এটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় রূপ নিতে পারে বলে স্মারকলিপিতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ব্যবসায়ী ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সরকার নির্দেশিত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, অন্যথায় ব্যবসায়ীরা যেকোনো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতি ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় পরিষদ ও সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট ট্রেড সেন্টার ভেজিটেবল মার্কেট, হাজী নওয়াব আলী সবজি মার্কেট ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এ স্মারকলিপি দেন। এ সময় সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমেদ, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জিয়াউল হক, সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. দিলওয়ার হোসেন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল গফফার মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম মুনিম, সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া, কার্যকরী সভাপতি আব্দুস ছালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, সিলেট ট্রেড সেন্টার ভেজিটেবল মার্কেটের সভাপতি মো. ছাদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. রাজু আহমদ, হাজী নওয়াব আলী সবজি মার্কেটের সভাপতি আলহাজ্ব মো. আবুল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী বোরহান উদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।