আল খায়ের ফাউন্ডেশন-এর প্রশংসনীয় উদ্যোগ
পঁচিশ জুটির যৌতুকবিহীন বিয়ে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৩:৩৬:২৪ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
আমানউল্লাহ কনভেনশন হল। সিলেটের কয়েকটি অভিজাত হলের মধ্যে একটি। লক্ষাধিক টাকায় ভাড়া নিয়ে এধরণের হলে অভিজাত পরিবারগুলোই আসেন, অনুষ্ঠান করেন। নুন আনতে পানতা ফুরায়-এমন মানুষগুলোর অনেকে এমন হল চোখেও দেখেননি, আর বিয়েসাদি করাটা কল্পনাও করা যায় না। অথচ বিত্তশালীদের এই কনভেনশন হলে দরিদ্র পরিবারের পঞ্চাশজন ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেয়া হয়েছে। তা-ও যৌতুকবিহীন বিয়ে। সেই বিয়ের আয়োজন করলো আল খায়ের ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবামূলক সংস্থা। অনুষ্ঠানে বর-কনের পরিবার এবং অতিথি মিলিয়ে পাঁচশতাধিক মানুষের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কাছে পরাজিত সিলেটের সুনামগঞ্জ সদর. শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ, কানাইঘাট এবং জৈন্তাপুর উপজেলার পঞ্চাশজন বর-কনের পরিবার। দৈন্যতার কারণে পরিবারগুলো যখন দিশেহারা-এমন সময় আল খায়ের ফাউন্ডেশন তাদের পাশে দাঁড়ালো। ফাউন্ডেশনের খরচে পঁচিশ যুগলকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা হলো। গণবিয়ের মধ্যদিয়ে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ করানো হলো সেই পঞ্চাশ তরুণ-তরুণীকে।
গতকাল সোমবার ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি আর লালশাড়ি পরে অর্ধশত বর-কনে গাড়িতে করে দুপুরে যখন শাহীঈদগাহের আমানউল্লাহ কনভেনশনের ওয়েডিং হলে আসেন তখন অন্যরকম এক পরিবেশ। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে রীতি অনুযায়ী খাওয়া-ধাওয়া আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছুই ছিল। শুধু ছিলোনা যৌতুক। দুই পক্ষের পরিবারের লোকজনও বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। গণবিয়ের অনুষ্ঠানে কানাইঘাট থেকে আসা এক কনের অভিভাবক মুজিবুর রহমান জানান, টাকার অভাবে বর পাওয়ার পরও বিয়ের আয়োজন করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। অন্যদিকে সময়ও অপেক্ষা করছে না।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কুলসুমা বেগম বলেন, দিনতারিখ ঠিক করেও মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলাম না। এ অবস্থায় খবর পেলাম, যৌতুকবিহীন বিয়ের। আমরা আল খায়ের ফাউন্ডেশনের কাছে কৃতজ্ঞ।
গরিব হওয়া সত্ত্বেও ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজনে খুশি অভিভাবকদের মতো বর-কনেও। তারা বলছেন, এমন সুন্দর একটি দিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, সেটি কল্পনা করতে পারিনি।
বিয়ের পাশাপাশি সংসার জীবন শুরুর জন্য প্রত্যেককে একটি সেলাই মেশিন, একটি ভ্যানগাড়ি, রান্নার চুলা, পানির ফিল্টার, লেপ-তোষকসহ ঘরের কাজে লাগে এমন নানা সরঞ্জাম দিয়েছে সংস্থাটি। একই সাথে বর-কনে আনা-নেয়ার জন্য যে গাড়িগুলো রয়েছে সেগুলোর খরচও ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বহন করা হয়েছে।
আল খায়ের ফাউন্ডেশন ব্রিটেনের একটি সংস্থা। বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব জানান, ‘২০২৩ সালে একইভাবে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ষাট জুটির বিয়ে হয়েছিলো একই হলে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো আয়োজন করা হলো। তিনি বলেন, অন্য সবকিছুর সঙ্গে প্রত্যেক জুটিকে একমাসের খাবার, নগদ কিছু টাকাও দেয়া হয়েছে উপহার স্বরূপ। যৌতুকবিহীন এই বিয়ে ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’