ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে কেড়ে নিল ৪৫ প্রাণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৪, ৩:৪০:৩৬ অপরাহ্ন
![ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে কেড়ে নিল ৪৫ প্রাণ ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে কেড়ে নিল ৪৫ প্রাণ](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2024/03/dak-768x429.jpg)
অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর বেইলি রোডে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে আগুনে পুড়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আতঙ্কে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়াসহ নানা কারণে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাত ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চলছিল। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে স্বজনরা ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতালে ভিড় করছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তারা ভবনটি থেকে কমপক্ষে ৭৫ জনকে উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে নারী, শিশুসহ ৪২ জনকে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগেছে। প্রকৃত কারণ উদঘাটনে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার কিছু সময় পরই একটি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ২ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টের নিচতলায় আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজজনিত ত্রুটির কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে রেস্টুরেন্টে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে তথ্য পায় তারা। রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে সর্বপ্রথম ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে একে একে যোগ দেয় আরও ১২টি ইউনিট। কিন্তু এর আগেই ভবনজুড়ে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তখন জীবন বাঁচাতে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ভবনে আটকে থাকা লোকজনদের অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন।
তাদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার কয়েক মিনিট পরই বিকট শব্দে গ্যাসের একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এতে পুরো ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা আগুনে পুড়ে যায়। আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভবনটির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন ভেতরে আটকে পড়াদের স্বজনরা। সেই সঙ্গে উৎসুক মানুষের ভিড়ে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়। পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বারবার চেষ্টা করেও তাদের সরাতে পারেননি।
রাত পৌনে বারোটা থেকে একটার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে থাকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। সেখানে দেখা যায়, হাসপাতাল জুড়ে স্বজনদের কান্না। একেকটা অ্যাম্বুলেন্স আসার পর শুরু হয় হাসপাতাল কর্মীদের ছোটাছুটি। ‘সরেন সরেন’, ‘রাস্তায় কেউ দাঁড়াবেন না’, এমন কথা বলতে বলতে সমানে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায় হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পর্যবেক্ষণ কক্ষে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কক্ষের বাইরে দগ্ধদের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে।
রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় মোট ৪৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে ও ৩৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আইজিপি বলেছেন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের একজন সদস্যকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, আমরা তল্লাশি করে দেখছি আরও কেউ আছে কি না। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করছি। আমার ধারণা, চুলা অথবা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছে। আমাদের কোনো সদস্য আহত হয়নি। কিছু মাইনর ইঞ্জুরি হয়েছে। আমরা ঢাকা মেডিকেলে আহতদের পাঠিয়েছি।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কাচ্চিভাইয়ে চূড়ান্ত আগুন লাগে। আমাদের এক সহকর্মীর কন্যা মারা গেছে। আমাদের একজন পুলিশ সদস্যও সেখানে নিহত হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে আপনাদের আরও বিস্তারিত জানাব।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বাণিজ্যিক ভবনটির আশপাশের পেছনে অনেক ভবন ছিল। আগুন ছড়িয়ে আরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। ভবনটি তৈরিতে কারও গাফিলতি ছিল কি না সে বিষয়ে রমনা থানায় একটি মামলা করা হবে। ভবনটি রাজউকের প্ল্যান অনুযায়ী করা হয়েছে কি না, প্ল্যানের কোনো ব্যত্যয় করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।