সাত দিনে ছয় হত্যাকান্ড
সিলেটে হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৪, ১:০৯:০৩ অপরাহ্ন

কাউসার চৌধুরী :
সিলেটে হঠাৎ করেই হত্যাকান্ড বেড়ে গেছে। গেল এক সপ্তাহে কলেজ ছাত্র, সালিশ ব্যক্তিসহ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ছয় জন। গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দেয়ার পথেই রাস্তায় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন এক যুবক। সিলেট জেলায় দুটো, হবিগঞ্জ জেলায় দুটো আর সুনামগঞ্জ জেলায় অপর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা হঠাৎ করে খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশ করেছেন উদ্বেগ ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’র সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটের ডাককে বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও ন্যায় বিচারে দীর্ঘসূত্রতার ফলে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটছে। আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বল নজরদারি, দুর্বল তদন্তের কারণেও অনেক অপরাধী পার পেয়ে যায়। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারলেই অপরাধ কমে আসতে পারে বলে তার মন্তব্য।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন (বিপিএমÑসেবা) বলেন, দুটো হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। শিগগিরই ঘাতকদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।
নগর পুলিশের শাহপরান থানার ওসি মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, উপশহরে আর্থিক লেনদেন নিয়ে মামা তার ভাগ্নেকে হত্যা করে। আর গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
চিকিৎসকদের সাথে কথা হলে তারাও আত্মহত্যার কথা বলছেন। ওসি জানান, ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
জানা গেছে, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার রুকনপুর জামে মসজিদের পাশে গতকাল মঙ্গলবার সকালে জুনেদুল ইসলাম (২৭) নামের এক যুবককে প্রকাশ্যে দিবালোকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত জুনেদ বালাগঞ্জ উপজেলার কলমপুরের কনাই মিয়ার পুত্র। সিলেটের একটি আদালতে হাজিরা দিতে আসার পথে প্রতিপক্ষের সশস্ত্র লোকজন হামলা চালায়। হামলায় জুনেদ নিহত ও তার সহোদর জাহেদুল ইসলাম (৩৩) গুরুতর আহত হন।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার ওসি মো আরিফ হোসাইন হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে, এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সিলেট নগরের অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহরের ই -ব্লকের ২ নম্বর রোডের একটি বাসায় গত সোমবার রাতে মামা আবু সুফিয়ান (৩৩) তার আপন ভাগ্নে মিজানুর রহমান রাফিকে (২৪) হত্যা করে। পরে পুলিশ তার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। নিহত মিজানুর রহমান রাফি গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জের মাইজগাঁওয়ের আব্দুল বারীর পুত্র। আর ঘাতক আবু সুফিয়ান জকিগঞ্জের বারহাল ইউনিয়নের বোরহানপুর গ্রামের বদরুদ্দিনের পুত্র এবং নগরের সোবহানীঘাটের একজন ব্যবসায়ী।
পুলিশ জানায়, ব্যবসায়িক অর্থ নিয়ে রাফি ও সুফিয়ানের মধ্যে দ্বন্দে¦র জের ধরেই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ইউনিয়নের গাতাবের এলাকায় গত শনিবার বিকেলে বস্তাবন্দি অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতেও পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের খারাই গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় এলাকার সালিশ ব্যক্তিত্ব মো. চন্দন মিয়া (৬০) খুন হন।
এদিকে, সিলেট নগরের উপশহরের ই-ব্লকের ৭নং রোডের ২৫নং বাসা থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভোরে গৃহবধূ সুমাইয়া জান্নাত সুমির (২২) গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সুমাইয়া দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানার কুচাই গ্রামের শাহ মইনুর রহমানের কন্যা।
এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌর এলাকার ওসমানী সড়কের চৌদ্দ হাজারি মার্কেটের সামনে সহপাঠীদের হাতে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রাইসুল হক তাহসিন (১৯) খুন হন। প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী রাইসুলের ঘাতকরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।