স্বতন্ত্র পেশাগত পরিচয় তৈরিতে সক্ষম সিলেটের দুই অপরাজিতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৭:৪২ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স :
সুযোগ পেলে নারীরাও পারেন ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে। আর এটি সম্ভব আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণেই। সিলেট সদর উপজেলার টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার এবং হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য রোকিয়া বেগম-নামের দুই অপরাজিতা এভাবেই সফলদের কাতারে নিজেদের নাম লিখিয়েছেন।
অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্য এই নারী নেত্রীরা জানালেন, এক সময় তারাও ছিলেন গৃহিণী। শুধুমাত্র গৃহিণী পরিচয় মুছে এখন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের স্বতন্ত্র পেশাগত পরিচয়। সেই সঙ্গে মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজ করা নিয়ে সমাজে যে কুসংস্কার ছিল তাও ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছেন। তাদের আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের কারণেই সেটি করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নারীদের পশ্চাৎপদতার অবসান ঘটবে বলেও আশাবাদী তারা। ওই অপরাজিতারা জানান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে নারীদের অযোগ্য-অদক্ষ মনে করা হতো। কিšুÍÍ, নারীরা বুদ্ধিমত্তা ও নিজেদের যোগ্যতা বলে সেই ধাপ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিলেটেও নারী জাগরণ ঘটতে আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না বলেও মন্তব্য তাদের। এ ব্যাপারে তারা রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্যদের কর্মকান্ডে তৃণমূল পর্যায়ের নারীসমাজ উপকৃত হচ্ছেন। এতে পিছিয়েপড়া নারীরা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শিরিন আক্তার : নিজের যোগ্যতায় গৃহিণী থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে পরিচিতি লাভ করেছেন শিরিন আক্তার। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সিলেট জেলা শাখার শিশু ও মহিলা বিষয়ক সহ-সম্পাদিকার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন শিরিন। নারী উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য তিনি সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা পরিষদ সদস্য হিসেবেও ছিলেন সোচ্চার। বর্তমানে অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সদস্য হিসেবে তৃণমূলে নারীর অগ্রযাত্রায় বিরামহীন কাজ করে চলেছেন। তিনি জানালেন, এখনও সনাতনী সমাজ কাঠামোতে আটকে আছে নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রাপ্তি। তিনি বলেন, ওই অধিকার আদায়ে নারীরা কাক্সিক্ষত স্থান দখল করতে না পারায় সুফল আসতে দেরী হচ্ছে। এজন্য নারী আন্দোলন আরো গতিশীল করতে প্রত্যাশী তিনি। শিরিন আক্তার বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে টুলটিকর ইউনিয়নে নারীর অগ্রযাত্রায় ব্যাপক কাজ করেছেন তিনি। অনেক প্রতিকূল পরিবেশ ডিঙ্গিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলা করেছেন ধৈর্য ও সাহসিকতায়। তৃণমূলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গত বছর অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৪, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তবে, তার নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেমে নেই বলে জানান তিনি। অপরাজিতা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নারী আন্দোলনকে বেগবান করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন শিরিন। দলমত নির্বিশেষে নারীসমাজ জাগ্রত হলে সকল স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
রোকিয়া বেগম : হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। অপরাজিতা নেটওয়ার্কেরও সক্রিয় সদস্য হিসেবেও রয়েছে তার সুনাম ও সুখ্যাতি। কাজ করে চলেছেন তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে নিতে। রোকিয়া জানালেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নারীর অগ্রযাত্রায় অনেক কিছুই করার আছে। তবে, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টি ভঙ্গি অনেক কাজেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। মুহূর্তেই এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। শিক্ষার আলো যত জাগ্রত হবে কুসংস্কার দূর হয়ে আলোর মশাল বড় হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রোকিয়া বেগম আরো জানান, শুধু কর্মক্ষেত্রে নয় নারীকে প্রতিটি স্তরেই নানা জটিলতা পাড়ি দিয়ে চলতে হয়। এ সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানান তিনি। এর ফলে বেড়েছে নারীর প্রতি বৈষম্যের জোরালো প্রতিবাদ। রোকিয়া বলেন, সৃষ্টিশীল কাজ করতে গেলে বাধাতো আসবেই, আর নারীর বেলায় এটির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তা সত্ত্বেও বসে নেই বাংলার নারীসমাজ। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নারী আন্দোলনের সহযাত্রী হিসেবে পুরুষ সহকর্মীদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।